সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল না করলে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্বের ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠন। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থার (ইউনেসকো) কাছে দেওয়া এক খোলা চিঠিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সুন্দরবন রক্ষায় একে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।

আগামী ২ জুলাই পোল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সাধারণ সভায় সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ওই সভাকে সামনে রেখে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এ বছর সুন্দরবন তার বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মানপ্রাপ্তির ২০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সেই উদ্‌যাপনে কালো ছায়া ফেলবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছউল আলম মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকারী সংস্থা যাতে তা বাস্তবায়ন করে, সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ তদারকি চালিয়ে যাচ্ছি।’

সুইডেনভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন প্রটেক্ট দ্য ফরেস্টের আমান্দা টাস, দক্ষিণ আফ্রিকা-ভিত্তিক সংগঠন টিম্বার ওয়াচের ওয়ালি মিনি ও থাইল্যান্ড-ভিত্তিক সংগঠন কেট লাপিন স্বাক্ষরিত ওই খোলা চিঠি আবেদনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, ঘানা, তানজানিয়া, ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সংগঠন রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব দরবারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এই দুই দেশের উচিত যৌথভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়া। তা না করে এই দুই দেশ যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে, যা একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশ এর জিম্মাদার হিসেবে একে রক্ষা করার দায়িত্ব পেয়েছে। এই দায়িত্ব যদি বাংলাদেশ ঠিকমতো পালন না করে, তাহলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ নিয়ে বলার অধিকার আছে। তবে আমরা চাই না সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাক। আমরা চাই ইউনেসকো সরকারকে বুঝিয়ে বা চাপ দিয়ে সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগী করুক।’

চিঠিতে বলা হয়, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ-ব্যবস্থা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ বনের ওপর লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ থেকে বাংলাদেশের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে এই বন।

খোলা চিঠির শেষ বাক্যে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব সুন্দরবনকে হারিয়ে ফেলার ভার বহন করতে পারবে না।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে এত সহজে বাদ দেওয়া হবে, আমরা মনে করি না।’