রেলের জায়গায় বিপণিবিতান

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে রেলওয়ের জায়গা দখল করে বিপণিবিতান নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বুধবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে রেলওয়ের জায়গা দখল করে বিপণিবিতান নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বুধবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে রেলওয়ের প্রায় ৩২ শতক জায়গা দখল করে ১৫০টি দোকানঘরের বিপণিবিতান নির্মাণ করছেন পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছালেক মিয়া। ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রতিটির জামানত হিসেবে ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন মেয়র।

এ ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষ শায়েস্তাগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। এ ছাড়া এলাকাবাসী রেলপথ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

জিডি ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের দক্ষিণ পাশে ও পৌরসভার প্রধান সড়কের উত্তর পাশে রেলের জায়গায় দোকানপাট গড়ে ওঠে। সম্প্রতি এসব স্থাপনা ভেঙে প্রায় ৩২ শতক জায়গা নতুন করে দখলে নেন মো. ছালেক মিয়া। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে পৌরসভার লোকবল নিয়ে পুরোনো স্থাপনা ভাঙা ও মাটি ভরাটের কাজ করান। এ ঘটনায় ১ মার্চ রেলের ভূসম্পত্তি কার্যালয়ের কানুনগো মো. গোলাম নবী শায়েস্তাগঞ্জ থানায় জিডি করেন। তা ছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রেল মন্ত্রণালয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিমুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটির তদন্ত চলছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বিপণিবিতানের সামনে ‘শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার বহুমুখী উন্নয়ন স্থাপনা’—লেখা সাইনবোর্ড। বিপণিবিতানে লম্বালম্বি আটটি ইউনিটে প্রায় ১৫০ আধা পাকা ও টিনশেডের দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

এলাকাবাসী বলছেন, পৌরসভার রসিদ ব্যবহার করে প্রতিটি দোকানঘরের জন্য ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা করে জামানত নিচ্ছেন মেয়র।

শায়েস্তাগঞ্জের লেঞ্জাপাড়ার বাসিন্দা আমজাদ আলী বলেন, তিনি এ বিপণিবিতানে একটি ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য জামানত দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শায়েস্তাগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এ মার্কেটের আয় তো পৌরসভা পাবে না। কারণ, এটা পৌরসভার কোনো প্রকল্পের অধীনে হচ্ছে না। আর্থিক সুবিধা মেয়র ভোগ করবেন।

জানতে চাইলে পৌর মেয়র ছালেক মিয়া বলেন, তাঁর পূর্ববর্তী মেয়র ফরিদ আহমেদ ওই জায়গাটি রেলের কাছে ইজারা চেয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সালে ওই জায়গায় বিপণিবিতান নির্মাণ করেন। পরে রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান করতে চাইলে সাবেক মেয়র হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০১১ সালে আদালত ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। বর্তমানে ওই মার্কেটের ঘরগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা নতুন করে নির্মাণ করছেন। পাশাপাশি জায়গাটি রেল থেকে ইজারা পাওয়ার জন্য তিনি গত বছর আবেদন করেছেন। দোকানঘরের জামানত ও ভাড়া কোথায় জমা হয়, জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘ইজারার কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে তা জমা হচ্ছে। তবে ইজারা পেয়ে গেলে এর সব আয় পৌরসভার তহবিলে জমা হবে।’

তবে ফরিদ আহমেদ বলেন, তিনি মেয়র থাকাকালে রেলের কাছে ইজারা চেয়েছিলেন সত্য। তবে ব্যক্তিগতভাবে বিপণিবিতান নির্মাণ করেননি। এলাকার লোকজন তা নির্মাণ করেন। তাঁর দাবি, ২০১১ সালে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা ছালেক মিয়ার নেতৃত্বে এই জায়গা দখলের চেষ্টা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এরপর থেকে আদালতের নির্দেশে এই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা রয়েছে।

রেলওয়ের এস্টেট কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান বলেন, যে জায়গার ওপর বিপণিবিতান নির্মাণ করা হচ্ছে, এ জায়গা তাঁরা কাউকে ইজারা দেননি। শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের পাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গা। এ জায়গার ওপর উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার কারণে তাঁরা কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। আদালত অবমাননা করে পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বিপণিবিতান নির্মাণ করছেন। তবে এ জায়গা উদ্ধারে সব আইনগত প্রক্রিয়া তাঁরা পরিচালনা করবেন।