নির্বাচন প্রস্তুতি: মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু আ.লীগের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় কর্মিসভা, বর্ধিত সভা ও সমাবেশ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তবে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মাঠে সেভাবে তৎপর না থাকায় এখনো নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়নি।

আওয়ামী লীগের আটজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদের সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব পাওয়া গেছে।

এসব নেতা ও সাংসদ বলেছেন, ভোটার, কর্মী এমনকি আওয়ামী লীগ নেতারাও দুটি বিষয়ে এখনো স্পষ্ট নন। তা হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে কি না। নির্ধারিত সময়ের শেষে নাকি তার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নির্বাচনে এলে জোট-মহাজোটের বিষয় চলে আসবে এবং সে ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, এটা ধরে নিয়েই দলীয় নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সম্ভাব্য সবই করবে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা সফরে যাচ্ছেন এবং রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। সর্বশেষ ফরিদপুরে তিনি সমাবেশ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও জেলায় জেলায় কর্মিসভা, প্রতিনিধি সভা ও বর্ধিত সভা করছেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম ও সিলেটে এমন সভা হয়েছে।

এসব সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এসব কর্মিসভার লক্ষ্য দলের কোন্দল মিটিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী করা। জনগণের মধ্যেও নির্বাচনী আবহ তৈরি করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য সরকার পরিচালনা করা। বিএনপিরও নিশ্চয় সেই লক্ষ্য আছে। তারাও হয়তো নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবে। আর সব দল তৎপর হলে নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়ে যাবে।

 আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে এই কথা দলের নেতারা প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে বলছেন। কিন্তু দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা মেয়াদ পূর্তির প্রায় পৌনে দুই বছর আগেই সভা-সমাবেশে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে কারা দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন আর কারা বাদ পড়ছেন, এ নিয়ে দলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের অনেকের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা নেই। এর বাইরে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও নিজ এলাকার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগসহ কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রতি তিন মাস পরপর জরিপ-সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে কিছু স্থায়ী ও সাধারণ মানদণ্ড তো আছেই। এগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। এখনো জরিপ চলমান আছে। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও প্রধানমন্ত্রীকে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এসব জরিপে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে, তাদের অতীত ও বর্তমান এবং দুর্বল দিক—সবই থাকছে। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচন, গত বছরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনেও একইভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারণী একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রয়োজন আছে এমন অনেককে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে অবস্থার উন্নতি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ পুরাপুরি নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে নেমে গেছে, ব্যাপারটা তেমন নয়। আওয়ামী লীগ এখন ঘর গোছানোর চেষ্টা করছে।

আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এর বিকল্প নেই। বিএনপি ইতিমধ্যে ১০-১২ বছর ক্ষমতার বাইরে। এবারও নির্বাচন বর্জন করলে কর্মীরা থাকবে না।