মন্ত্রণালয়ে আর সনদ যাচাই নয়

>

* মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে ২২ হাজার আবেদন * এখন থেকে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও ভর্তি করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটে সনদ যাচাই করবে

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সনদ যাচাইয়ের (ভেরিফিকেশন) পদ্ধতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ভর্তি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সনদ যাচাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে না পাঠিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মিলিয়ে নেবে।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সারা দেশের বিভিন্ন তালিকায় থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সনদ যাচাইয়ের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বা ভর্তির পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বর্তমানে যাচাইয়ের জন্য প্রায় ২২ হাজার আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে আছে। সনদ যাচাইয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে নিয়োগ পেয়েও চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। যেমন অগ্রণী ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া ৬৫৫ জন নয় মাস ধরে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না সনদ প্রত্যয়ন না হওয়ায়।

তাঁদের অন্তত ২০ জন গত শনিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে বলেন, সনদ যাচাইয়ে বিলম্বের কারণে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমের সন্তান জহির উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালের আগস্টে আমরা ৬৫৫ জন নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সনদ যাচাইয়ে বিলম্ব করায় আমরা এখনো চাকরিতে যোগ দিতে পারিনি। ওই সময় যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এই চাকরি হওয়ায় আমরা অন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু যোগ দিতে না পেরে প্রতিদিন ব্যাংক আর মন্ত্রণালয়ে দৌড়াচ্ছি। পরিবারের সদস্যরা প্রশ্ন তোলেন, আদৌ আমরা কী চাকরি পেয়েছি?’

ওই ৬৫৫ জন নিয়োগের দাবিতে গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন। তাঁরা দুই কার্যদিবসের মধ্যে নিয়োগপত্র না দিলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে তাঁরা ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, একসঙ্গে কয়েক শ সনদ যাচাইয়ের জন্য আসে। জনবল কম থাকায় এবং আবেদন ক্রমাগত আসায় সব প্রক্রিয়া শেষে এসব সনদ প্রত্যয়ন করতে ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে সনদ যাচাই শেষ করার কথা। এরপর তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানাবে মন্ত্রণালয়।

৩৪তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির সুপারিশ পাওয়া ১১৬ জনও সনদ যাচাইয়ে বিলম্বের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের ৬৭ জনকে প্রত্যয়ন করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। বাকিদের তথ্য জানাতে একাধিকবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বৃত্তির ক্ষেত্রেও ঘটছে এ রকম ঘটনা।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত নিয়োগের আগেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই করা উচিত।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময়ক্ষেপণ যাতে না হয় সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আর সনদ যাচাই করা হবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের সব তালিকা ওয়েবসাইটে দিয়েছি। যারা নিয়োগ দেবে বা ভর্তি করবে, তারাই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখে তথ্য মিলিয়ে নেবে। দু-এক দিনের মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে আমরা বিষয়টি জানিয়ে দেব। তবে আমাদের কাছে যেসব আবেদন রয়েছে তা নিষ্পত্তি করে দেব।’ প্রতি বছর ৫০ হাজার আবেদন পড়ে বলে তিনি জানান।