'আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করবই'

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির হাত থেকে ক্রেস্ট নিচ্ছেন চট্টগ্রামের জয়িতা উম্মে তানজিলা। ছবিটি গতকাল দুপুরে নগরের এলজিইডি ভবন থেকে তোলা l প্রথম আলো
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির হাত থেকে ক্রেস্ট নিচ্ছেন চট্টগ্রামের জয়িতা উম্মে তানজিলা। ছবিটি গতকাল দুপুরে নগরের এলজিইডি ভবন থেকে তোলা l প্রথম আলো

বাল্যবিবাহকে নারীর উন্নয়নের প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। চট্টগ্রাম বিভাগের জয়িতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নারীর বিয়ের বয়স ১৮ বছর। কেউ যদি শর্তের কথা উল্লেখ করে বাল্যবিবাহের পক্ষে ভুল বোঝায় তাদের বলবেন, এই শর্ত বিশেষ ক্ষেত্রে, এটা মোটেও সকলের জন্য নয়। আমরা যে জায়গাতে আছি সে জায়গাতেই থাকব, আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করবই।’

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের এলজিইডি মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতাসহ মোট ৫৫ জন জয়িতাকে সংবর্ধনা দিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা থেকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৫ জন জয়িতাকে নির্বাচন করা হয়। তাঁদের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঘোষণা করা হয় ৫ জনকে।

শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের একজন চাঁদপুর জেলার দক্ষিণ মতলবের আজমিরি বেগম। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। সেটিও তিন দশক আগের কথা। বিয়ের কয়েক বছর পর কৃষক স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন ঘর ছাড়েন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর তিন শিশুসন্তান। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি নিজেই একজন সফল কৃষক। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা আজমিরি এবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতার একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন নারীকে সফলতা অর্জন করতে একজন পুরুষের তুলনায় অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। নারীরা এগিয়ে গেলে পুরুষেরও অনেক সমস্যার সমাধান হবে। নারীদের এগিয়ে নিতে পুরুষদের সহযোগিতা প্রয়োজন। পুরুষকে পেছনে ফেলে নয়, বরং সমানতালে নারীরাও এগিয়ে যাবে, এটাই এখন চাওয়া।

বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতা হলেন অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে কক্সবাজারের আয়শা সিরাজ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নোয়াখালীর রুমা আক্তার, সফল জননী খাগড়াছড়ির হ্নলাক্রাপ্রু মারমা, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা চাঁদপুরের আজমিরি বেগম ও সমাজ উন্নয়নের অসামান্য অবদান রাখা ফেনীর পান্না কায়সার। এই ৫ জনসহ ৫৫ জয়িতার হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিভাগের ৫ সেরা জয়িতাকে শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহিন আহমেদ চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম স্থানীয় বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, সাবেক সাংসদ হাসিনা মান্নান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন, মানবাধিকার নেত্রী জেসমিন সুলতানা প্রমুখ।

নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ বলেন, সরকার নারীশিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন ৪০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এ নিয়ে তুষ্ট হলে চলবে না। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ১৮টি বিষয়ে নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দুই কোটি নারীর হাতকে দক্ষ হাতে পরিণত করা হবে। অন্তত ৪০০ নারী গার্মেন্টস (পোশাক কারখানা) মালিক দরকার। যাঁরা অন্যদের কাজ দেবেন।