‘ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই’ কথাগুলো কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানীর মা জাহানারা বেগমের। আজ মঙ্গলবার ফেলানীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি ‘প্রথম আলো’কে কথাগুলো বলেন।
কিশোরী ফেলানী ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়।
ফেলানীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আর কেউ ফেলানীর খোঁজখবরে আসে না। অন্যান্য বছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলেও এ বছর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে নিজেদের সামর্থ্য বিবেচনা করে মিলাদ ও গরিব মানুষকে খাওয়াছি।’
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ভারতীয় বিচারিক কর্তৃপক্ষ ফেলানী হত্যার রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি আশ্বস্ত। তাঁর আশা, ভারতীয় আদালতে তাঁর মেয়ে সুবিচার পাবে।
সকালে কুয়াশা ভেদে করে ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের ছায়া। তিন বছর পরও সন্তান হারানোর ব্যথা ভুলতে পারেননি মা-বাবা। মা জাহানারা বেগম চোখের পানি ফেলে বলেন, ‘আশা করছিলাম সরকার আমার ফেলানীর হত্যার ন্যায্য বিচারডা কইর্যা দিবে। ন্যায্য বিচারডা পাইলে মাইয়াডার আত্মা শান্তি পাইতো। কিন্তু কোনো কিছুই তো পাইতাছি না।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ১৫ বছরের ফেলানী কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। কাঁটাতারের ওপর দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহ নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফ বাদী হয়ে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি তাদেরই এক সদস্য অমিয় ঘোষকে আসামি করে মামলা করে। গঠন করে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালত।
কোচবিহারের সোনারীতে বিএসএফের উদ্যোগে গঠিত বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। গত ১৯ আগস্ট আদালতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবদুল হানিফ সাক্ষ্য দেন। কিন্তু আদালত রায়ে অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। এর প্রতিবাদে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। এর পরই ভারতীয় সরকার ফেলানী হত্যার রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়।