শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বাল্যবিবাহ ঠেকাল 'ঘাসফুল'

কনেবাড়ির আঙিনায় বরযাত্রীদের ভূরিভোজের আয়োজন। অন্যপাশে কনে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর গায়েহলুদের প্রস্তুতি। এ খবর পৌঁছে যায় ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাত ছাত্রীর সংগঠন ঘাসফুলের কাছে। পরে গতকাল বুধবার দুপুরে প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং আরও দুটি বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ বাল্যবিবাহ বন্ধ করল তারা।
ঘাসফুলের সদস্যরা জানায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীর বিয়ের আয়োজনের খবরটি সকালে পেয়ে তারা তাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেককে জানায়। কনের বাড়ি স্কুল থেকে বেশ দূরে হওয়ায় তিনি ঘাসফুলের সদস্যদের একা পাঠাতে চাননি। তিনিও যেতে চান। পরে তারা তাঁকে নিয়ে প্রথমে মুশুলি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। সেখানে ছাত্রীদের ঘটনাটি বললে তারাও যেতে চায়। সঙ্গী হন এ স্কুলেরও প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় পাশের মুশুলি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও। এর মধ্যে পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশের কিছু সদস্যও আসেন। পুলিশ ও শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রামের মেঠো পথ ধরে কনের বাড়ির দিকে রওনা হয়। এ খবর পেয়ে কনের পরিবারের সদস্যরা ঘাবড়ে গিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যান। ছাত্রীরা বাড়ি-বাড়ি খুঁজে কনের মাকে নিয়ে আসে। বোঝানোর পর তিনি এ বিয়ে বন্ধে রাজি হন। কনের মা বলেন, পড়ালেখার খরচ জোগানো সম্ভব না হওয়ায় তিনি মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছিলেন।
নান্দাইল থানার এসআই মো. নুরুল হুদা বলেন, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দেবেন না মর্মে অঙ্গীকারনামায় সই করেছেন কনের মা। আর রান্না করা খাবার গ্রামবাসীর মধ্যে পরিবেশন করা হয়। উপজেলার তারঘাট আনসারীয়া আলিম মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) মো. আবদুর রহিম ওই মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নান্দাইলের ইউএনও মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঘাসফুলের উদ্দীপনায় মনে হচ্ছে নান্দাইল উপজেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত করা সম্ভব হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরেক বাল্যবিবাহ বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ওই ছাত্রীর সঙ্গে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজুরী গ্রামের এক যুবকের আজ বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ঠিক হয়। খবর পেয়ে ফরদাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহাম্মদ গতকাল মেয়ের বাড়িতে গিয়ে এ বিয়ে বন্ধ করে দেন।