কিশোর-কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা কম নেয় গোপনীয়তার অভাবে

গোপনীয়তা না থাকায় কিশোর-কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা কম নেয়। অন্যদিকে সেবাদাতারা অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে চান না। আবার স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা নিয়ে সন্তান-অভিভাবকদের মধ্যে এখনো খোলামেলা আলোচনার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি।
‘স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাসমূহ পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সেমিনারে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন হলে এর আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ।
সেমিনারের শুরুতেই ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিয়াদ মাহমুদ তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, সারা বিশ্বে প্রতিদিন তিন হাজার কিশোর-কিশোরী মারা যায়। বাংলাদেশেও তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঝুঁকি এড়াতে দরকার সুষম খাবার, শারীরিক কসরত ও অ্যালকোহলমুক্ত থাকা।
রিয়াদ মাহমুদ আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সেবাদাতা অভিভাবকের উপস্থিতি ছাড়া কিশোর-কিশোরীদের সেবা দিতে আগ্রহী নন। আবার কিশোর-কিশোরীরা তাদের অনেক সমস্যা অভিভাবকদের বলতে চায় না। এ মানসিকতার পরিবর্তন না হলে তারা সেবার বাইরেই থেকে যাবে।
সেমিনারে জানানো হয়, দেশে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ কিশোরী প্রতিবছর গর্ভধারণ করে। তাদের পাশাপাশি অন্য কিশোর-কিশোরীদের চাহিদামতো স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও তাদের সেবা নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২০১৬ সালে খুলনা, ভোলা, জামালপুর ও নীলফামারীতে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাদানকারী কিশোর স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবার তথ্যগুলো রাখার জন্য পৃথক রেজিস্টার ব্যবহার করেন। তবে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা পর্যবেক্ষণের জন্য আরও তথ্য দরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খান বলেন, শুধু শারীরিক নয়, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল কাউন্সেলিং সুবিধা থাকলে তাদের ৫০ শতাংশের বেশি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি, তাদের জন্য পৃথক নারী-পুরুষ চিকিৎসক থাকা জরুরি মনে করেন তিনি।
তবে গবেষণাটির সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এতে শুধু চিকিৎসা নিতে আসা কিশোর-কিশোরীদের আলাদা রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি দেখা হয়েছে। কিন্তু কিশোর-কিশোরীরা সেবা নেয় কি না, তাদের সেবার কী ব্যবস্থা আছে, চিকিৎসক আছেন কি না এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি।
সেমিনারের আরেক উপস্থাপক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষক ফারিহা হাসিন বলেন, বর্তমানে কিশোর-কিশোরীরা বাস্তব ও ভার্চ্যুয়াল জগতে বিচরণ করে। এই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা করা দরকার।