প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য জানে না কর্তৃপক্ষ!

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো তথ্য জানা নেই বলে ভাষ্য কর্তৃপক্ষের।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের বাছাইপর্বের সকাল ভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে আরেক ভাগের পরীক্ষা হবে। এই পদে মোট পরীক্ষার্থী ২ লাখের বেশি।

অগ্রণী ব্যাংকের এই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে একাধিক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।

পরীক্ষার্থীদের ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাত থেকে তাঁরা হাতে লেখা ও ছাপা প্রশ্নপত্র দেখেছেন। আবার শুধু উত্তরও দেখা গেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে এই প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিনিময় করেন।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও উত্তরের নমুনা সকালে প্রথম আলোর হাতে আসে। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো।

বেলা ১১টায় সকাল ভাগের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একাধিক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পেয়েছেন তাঁরা।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ফেসবুকে হইহই ও খবর প্রকাশ হলেও এ ব্যাপারে কিছুই না জানার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে হয়। অনিয়ম দূর করতে এই কমিটি গঠন করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৮ হাজার পদে নিয়োগের লক্ষ্যে বছরখানেক আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ২২ লাখ আবেদন পড়ে। সম্প্রতি নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে।

সকাল ভাগের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব মোশারফ হোসেন খানের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পেয়েছিলেন?।’

ভোর রাত থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানালে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কেন জানালেন না?’

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষা শুরুর আগেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে জানালে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সংবাদ দেখার সময় কখন! আর এখন প্রচণ্ড মাথা গরম। আপনার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারব না।’

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে তারা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারা দরপত্র দেয়। অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষার দরপত্র নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ।

বিভাগের চেয়ারম্যান আবু তালেবের সঙ্গে দুপুরের দিকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। সব শুনে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে নাকি? কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।’

পরীক্ষা শুরু আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়িয়েছে শুনে আবু তালেব বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর আগে আগে কেন্দ্রে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা কীভাবে রাতেই পরীক্ষার্থীদের হাতে গেছে—এমন প্রশ্নে আবু তালেব বলেন, কীভাবে ছড়াল তা জানা নেই। এ নিয়ে কেউ অভিযোগও করেনি।

এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। গত ২১ এপ্রিল ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।