প্রশ্ন ফাঁস, বিকেলের পরীক্ষা স্থগিত

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত

অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের বাছাইপর্বের আজ শুক্রবার বিকেল ভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই পদে নিয়োগের বাছাইপর্বের সকাল ভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টায় আরেক ভাগের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

অগ্রণী ব্যাংকের এই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই অভিযোগ পাওয়া যায়। আজ সকাল ভাগের পরীক্ষা শেষে মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মিল থাকার কথা জানান পরীক্ষার্থীরা।

পরীক্ষার্থীদের ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাত থেকে তাঁরা হাতে লেখা ও ছাপা প্রশ্নপত্র দেখেছেন। আবার শুধু উত্তরও দেখা গেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে এই প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিনিময় করেন।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও উত্তরের নমুনা আজ সকালে প্রথম আলোর হাতে আসে। সকালে পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বেলা ১১টায় সকাল ভাগের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একাধিক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পেয়েছেন তাঁরা।

বিকেল ভাগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে বলে একাধিক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন। বিকেল ভাগের ফাঁস হওয়া কথিত প্রশ্নের নমুনা প্রথম আলোর হাতে এসেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে হয়। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে তারা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারা দরপত্র দেয়। অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষার দরপত্র পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ।

বিভাগের চেয়ারম্যান আবু তালেব আজ বেলা সোয়া একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল ভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর সকালে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে আবু তালেবের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সব শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে নাকি? কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।’

পরীক্ষা শুরু আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়িয়েছে শুনে আবু তালেব বলেছিলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর আগে আগে কেন্দ্রে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা কীভাবে রাতেই পরীক্ষার্থীদের হাতে গেছে—এমন প্রশ্নে আবু তালেব বলেন, কীভাবে ছড়াল তা জানা নেই।

প্রায় একই সময় ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব মোশারফ হোসেন খানের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পেয়েছিলেন?’

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

ভোর রাত থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানালে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কেন জানালেন না?’

পরীক্ষা শুরুর আগেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে জানালে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সংবাদ দেখার সময় কখন! আর এখন প্রচণ্ড মাথা গরম। আপনার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারব না।’

সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ জানার পর ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ তৎপর হয়। তারা সকাল ও বিকেল ভাগের পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহ করে। যাচাই শেষে বিকেল ভাগের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। গত ২১ এপ্রিল ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন: