স্মার্টফোনে কী দেখছেন পরীক্ষার্থীরা!

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার সকাল নয়টা। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সামনে পরীক্ষার্থীদের বেশ ভিড়। তাঁরা অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের বাছাইপর্বের সকাল ভাগের পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন। অনেকে শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন বইপত্রে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। আর অনেকের চোখ স্মার্টফোনে। একটু খটকা লাগে। স্মার্টফোনে কী দেখছেন পরীক্ষার্থীরা!

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে কেউ মুখ খুলছিলেন না। প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

অবশেষে দুজনকে পাওয়া গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। খোলামেলাভাবে তাঁরা স্বীকার করেন, পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও উত্তর আছে তাঁদের মুঠোফোনে।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত

দুই পরীক্ষার্থীর মুঠোফোনে থাকা প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেখার সুযোগ হয় এই প্রতিবেদকের।

ওই দুই পরীক্ষার্থী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাঁরা এসব প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই পদে নিয়োগের বাছাইপর্বের সকাল ভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বেলা সোয়া ১১টার দিকে একই কেন্দ্রের সামনে ওই দুই পরীক্ষার্থীর সঙ্গে ফের কথা হয়। এ সময় তাঁদের চোখেমুখে ছিল অবিশ্বাস মেশানো হাসি। তাঁরা এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা যে প্রশ্নপত্র আগেই পেয়েছিলেন, তার সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে। আর হাতে লেখা উত্তর থেকেও কমবেশি পরীক্ষায় এসেছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি তাঁরাও টের পেয়েছেন। সকাল ভাগে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে কিছু পরীক্ষার্থী তাঁদের পরীক্ষা শেষ করেন।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হাতে লেখা উত্তর। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদপুরের একটি মেসে থাকা এক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি টাকার বিনিময়ে উত্তর পেয়েছেন। গতকাল দিবাগত রাত তিনটা থেকে মুঠোফোনে এসব উত্তর পান তিনি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ও উত্তর বিনিময় হয়েছে বলে অন্যদের কাছ থেকে জেনেছেন।

ওই পরীক্ষার্থীর ভাষ্য, ১০০ টাকাতেও প্রশ্ন ও উত্তর বিক্রি হয়েছে। পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে আগে পাওয়া প্রশ্নের প্রায় সবটাই মিলে গেছে। কোন উৎস থেকে প্রশ্ন পাওয়া গেছে, তা জানাননি তিনি।