নাম হতে পারত বাল্যবিবাহ জায়েজ আইন: আবুল মকসুদ

বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী সমাবেশ। ছবি: হাসান রাজা
বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী সমাবেশ। ছবি: হাসান রাজা

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর বিশেষ ধারা প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এ আইনের দ্বারা বাল্যবিবাহকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীতে এক নারী সমাবেশে সৈয়দ আবুল মকসুদ এ কথা বলেন। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাল্যবিবাহের বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে এক নারী সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে।

সমাবেশে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এই বিশেষ প্রেক্ষাপটের কোনো ব্যাখ্যা নেই। একে যে কেউ যেকোনো প্রেক্ষাপট বানিয়ে ব্যবহার করবে। এর নাম হতে পারত বাল্যবিবাহ উদ্বুদ্ধ বা জায়েজ আইন।’

উল্লেখ্য, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ পাস হয়। সেখানে ১৯ দফায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: হাসান রাজা
বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: হাসান রাজা

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন বলেন, সরকার দেশের বাইরে গিয়ে সব আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্ছে বললেও দেশে তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া তিনি আইনটির মধ্যে সামঞ্জস্য নেই বলেও উল্লেখ করেন। বিশেষ ধারা নিয়ে হাইকোর্ট সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

এ আয়োজনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আইনের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। গোটা জাতি ও দেশকে স্থায়ী একটা অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, আইনের দ্বারা হেফাজতের চিন্তার কাছে নতিস্বীকার করা হয়েছে।

সরকার নিরোধের নামে বাল্যবিবাহ আইন পাস করেছে বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আক্তার হোসেইন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আইনটিকে বাল্যবিবাহ স্বীকৃতি প্রদান আইন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়, আমরা গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু আমরা গ্রামে বড় হয়েছি, গ্রামের পরিস্থিতি জানি।’ তিনি আরও বলেন, আইনটি দ্বারা বুঝিয়ে দেওয়া হলো, ধর্ষণের ফলে কোনো মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে না।

প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের সদস্য মনীষা চক্রবর্তী বাল্যবিবাহের কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি রওশন আরা রুশো। বিশেষ ধারাটিকে সমাজের জন্যও ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত ও বঞ্চিত।

সমাবেশে উপস্থিত নারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহ রোধের জন্য আহ্বান জানানো হয়। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক দিলরুবা নূরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, সিপিবি নারী সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবীব।