জৈন্তাপুরে থানাহাজতে আসামির মৃত্যু

সিলেটের জৈন্তাপুর থানাহাজতে নজরুল ইসলাম বাবু নামের এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে থানাহাজত থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, থানাহাজতে রেখে যাওয়ার পর আজ শুক্রবার ভোরের দিকে বাবু আত্মহত্যা করেছেন। থানাহাজতের সামনে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ভিডিও ফুটেজ দেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, থানাহাজতের মধ্যে একজন হাজতি আত্মহত্যা করতে পারেন না। পুলিশের নির্যাতনেই বাবু মারা গেছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসারসহ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নজরুল ইসলাম বাবু জৈন্তাপুর উপজেলার কহাইগড় গ্রামের প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে। তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে বাবু ছিলেন একমাত্র ছেলেসন্তান। জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি করতেন বাবু। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে জৈন্তাপুরের বটেশ্বর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্ত্রীর করা একটি নির্যাতন মামলার আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বাবুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর এক স্কুলশিক্ষিকাকে বিয়ে করেন বাবু। এরপর থেকে শহরতলির বটেশ্বর এলাকায় বাস করতেন। বিয়ের দুই মাস পর থেকে তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি জৈন্তাপুর থানায় বাবুর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। স্ত্রীর মামলার কথা জানিয়ে জৈন্তাপুর থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে তিন সদস্যের পুলিশ দল বাবুকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

বাবুর বড় বোনের স্বামী মুজিবুর রহমানের ভাষ্য, গ্রেপ্তার করার সময় বাবুর সঙ্গে পুলিশের কথা-কাটাকাটি হয়। বাবু নিজেকে সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু পুলিশ অনেকটা জোর করে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। সকাল সাতটার দিকে পুলিশের মাধ্যমে বাবু মারা যাওয়ার খবর পায় পরিবার। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা পুলিশের মারধরে বাবু মারা গেছেন।’

মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবীর। তাঁর ভাষ্য, থানার এসআই শফিক ও এএসআই হ‌ুমায়ুনের নেতৃত্বে পুলিশ বাবুকে গ্রেপ্তার করে যথারীতি থানাহাজতে রাখে। সকালে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর কথা ছিল। ভোর ছয়টার দিকে তাঁকে মৃত দেখা যায়। এ সময় হাজতে কেবল বাবু ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আমার দপ্তরের সামনে সিসি ক্যামেরা আছে। এতে হাজতের সামনের কিছু অংশ দেখা যায়। ওই সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বাবুর আত্মহত্যা করার দৃশ্য। এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।’