সন্দেহ থেকে মারধরসহ স্ত্রীর চুল কাটার অভিযোগ

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী সানজিদা ইসলাম (২৪)। চড়, কিলঘুষি, সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকাসহ নানা নির্যাতনের চিহ্ন তাঁর শরীরে। মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়েছে। ভালোবেসে বিয়ে করার মাত্র দেড় মাস যেতে না যেতে স্বামী সাইফুল ইসলাম তাঁকে এমন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সানজিদা কুষ্টিয়া শহরের উদিবাড়ি এলাকার আহসান হাবীবের মেয়ে। আজ শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সানজিদা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জয়মন্ডুপ গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সানজিদার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেড় মাস আগে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়।

সানজিদার ভাষ্য, ১২ মে রাতে সাইফুল তাঁকে চড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁরই (সাইফুল) এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সানজিদার সম্পর্ক হয়েছে। এ কারণেই তাঁকে মারা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে মারধরের মাত্রা বেড়ে যায়। এ নিয়ে পরপর কয়েক দিন দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। মঙ্গলবার রাতেও তিনি সানজিদাকে মারধর করেন।

বুধবার রাতে সানজিদাকে আবার মারধর করেন সাইফুল। এ সময় হাত-পাসহ সানজিদার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দেন। ডান চোখে ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে সানজিদার মাথার চুল কেটে দেন তিনি। এ সময় বাড়িতে সাইফুলের পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকলেও তাঁরা কোনো বাধা দেননি। রাত দুইটার দিকে কৌশলে ঘর থেকে বেরিয়ে একই এলাকায় পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন সানজিদা। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বাবার বাড়ির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুপুরে কুষ্টিয়ায় আসেন তিনি। বিকেলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্যাতনের অভিযোগ ঠিক নয়। সানজিদার চরিত্র ভালো নয়। চাচাতো ভাইসহ এলাকার একাধিক ছেলের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। আমাকে ঘরে তালা দিয়ে সে পালিয়ে গেছে।’

হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রুমন রহমান জানান, সানজিদার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুই হাত ও পায়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে। মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট ক্ষত দেখা গেছে। সেটা সিগারেটের কি না, তা বলা যাচ্ছে না।

সানজিদার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে তাঁরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, সাইফুলের পরিবার অভিযোগ করেছে, সানজিদা অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। তবে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।