পরিবারের দাবি, শামারুখ আত্মহত্যা করেননি

হলি ফ্যামিলির চিকিৎসক শামারুখ মাহজাবীন ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন—তা মানতে চায় না তাঁর পরিবার। আর যদি আত্মহত্যাই হয়, তবে প্রভাবশালী সাবেক সাংসদ খান টিপু সুলতানের বাসায় তাঁর ছেলের বউ শামারুখ কেন আত্মহত্যা করলেন, তার কারণ জানতে চায় পরিবারটি।
শামারুখের বাবা নুরুল ইসলামের অভিযোগ, শুধু তিনি নন, যশোরের সবাই অনেকটা নিশ্চিত যে, তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে শামারুখের শ্বশুর প্রভাব খাটিয়েছেন।
২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর শামারুখের মরদেহ উদ্ধার হয় যশোরের সাবেক সাংসদ খান টিপু সুলতানের ধানমন্ডির ৬ নম্বর বাসা থেকে। ওই বাড়ির বাথরুমের রডে গলায় ফাঁস লাগা অবস্থায় শামারুখকে উদ্ধার করা হয়। শামারুখের বাবা ওই রাতেই কলাবাগান থানায় মামলা করেন। চার মাস পর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল কুদ্দুস মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শামারুখের মৃত্যুর দায় থেকে তাঁর শ্বশুর খান টিপু সুলতান, শাশুড়ি জেসমিন আরা বেগম ও স্বামী হুমায়ূন সুলতানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে খান টিপু সুলতান তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এই মেয়ের আত্মহত্যাপ্রবণতা ছিল আগে থেকেই। মানুষের তো যেকোনোভাবেই মৃত্যু হতে পারে। এটা নিয়ে এত কথার কী আছে?’ তবে শামারুখের স্বামী হুমায়ূন সুলতান স্বীকার করেছেন, স্ত্রীর আত্মহত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাননি তিনি। শামারুখকে কখনো অসুস্থ মনে হয়নি তাঁর। তিনি দেড় বছরের বিবাহিত জীবনে তাঁকে কখনো আত্মহত্যা করার কথা বলতে শোনেননি।
মেয়ের বিচার চাইতে চাইতে অসুস্থ ও ক্লান্ত নুরুল ইসলাম। সম্প্রতি যশোর থেকে ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘বিচার চাইতে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কেউ সহায়তা করছে না।’ কীভাবে আপনি নিশ্চিত হলেন আপনার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শামারুখের উচ্চতা পাঁচ ফুট আড়াই ইঞ্চি। এই মেয়ে পাঁচ ফুট উঁচু গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে কীভাবে আত্মহত্যা করে?’
মামলাটি তদন্ত করেছেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী রুহুল কুদ্দুস। ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এত আগের ঘটনা। আমার কিছু মনে নেই। আর মনে থাকলেও আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, ‘শ্বশুর প্রভাবশালী ও আইনজীবী বলেই শামারুখের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। না-রাজি আবেদন করলে নিম্ন আদালত তা খারিজ করে দিয়েছিল। এখন হাইকোর্টে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত যদি নির্দেশ দেন, তবে পুনঃতদন্ত সম্ভব।