আলামত নিয়ে মতামতের অপেক্ষা

কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে কে বা কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করেছে, তা এখনো উদ্‌ঘাটন হয়নি। ১৪ মাস পর এখন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা আলামতের বিষয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতামতের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। মতামত পাওয়া গেলে তদন্তের কাজ এগোতে পারে।
আজ থেকে ঠিক ১৪ মাস আগে গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর পাওয়ার হাউস-সংলগ্ন একটি ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করেন তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় ইয়ার হোসেনের করা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তনুর লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল থেকে জুতা, চুল (দুর্বৃত্তরা তনুর মাথার চুল কেটে ফেলে যায়), মুঠোফোনের কভারসহ অন্তত ১০টি আলামত সংগ্রহ করা হয়। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এগুলো পেলেই তদন্তের কাজ আরও এগোবে।’
এর আগে তনুর পোশাক থেকে আলামত নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল। তা থেকে তিন ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা পাওয়া যায়। এটাকে ব্যবহার করে তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি সিআইডি।
তদন্ত নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার কোনো খোঁজখবর নাই। এই মাসে জালাল সাহেব (তদন্ত কর্মকর্তা) ফোনও দেননি।’ তিনি জানান, মেয়ের চিন্তায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ পর্যন্ত তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে তিনবার। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন আহমেদ এ মামলার দায়িত্ব পান গত বছরের ২৪ আগস্ট। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকজনের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মেলানোর উদ্যোগ নেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোববারও এ মামলার কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তদন্তও চলছে। কয়েকজনের সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়। কিন্তু ফল আসেনি। এ মুহূর্তে আপাতত কোনো বাড়তি তথ্য দিতে পারছি না।’
তনু হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে তখন সারা দেশে শিক্ষার্থী এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভ করে। কিন্তু ১৪ মাসেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান। তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলন বৃথা যাবে না। এ জঘন্য হত্যার বিচার হতেই হবে।