পাথরঘাটায় সাড়ে চার মাসে ২৪টি বাল্যবিবাহ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের আবদুল লতিফ গত ১৩ মার্চ নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাঁর মেয়ের (১৪) বিয়ের আয়োজন করেন। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। কনে ও বরের বাবাকে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড দেন আদালত। কারাগার থেকে বের হয়ে তাঁরা দুজন ফের বিয়ের উদ্যোগ নেন। বর-কনেকে নিয়ে তাঁরা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী গ্রামে যান। সেখানে ২৩ মার্চ বিয়ে সম্পন্ন হয়।
উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ইকরবুনিয়া গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ের (১৫) বিয়ে হয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। সে স্থানীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এভাবে চলতি বছর এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাল্যবিবাহ হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং একাধিক জনপ্রতিনিধি এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাথরঘাটায় বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন। সংস্থাটির এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ২০১২ সালে বাল্যবিবাহ হয়েছিল ৯০টি। পরবর্তী বছর ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৮টি। গত বছর পর্যন্ত বাল্যবিবাহ কমতির দিকে ছিল। ২০১৪ সালে ৫৯টি, ২০১৫ সালে ৪৬ ও ২০১৬ সালে ৩৬টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। কিন্তু চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে (১৬ মে) এ উপজেলায় বাল্যবিবাহ হয়েছে ২৪টি।
এ বিষয়ে সুশীলনের পাথরঘাটা উপজেলা সমন্বয়ক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে যেভাবে বাল্যবিবাহ বেড়েছে, তাতে ২০১২ সালের হিসাবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাথরঘাটা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও পাথরঘাটা পৌরসভার কাউন্সিলর মুনিরা ইয়াসমিন বলেন, মূলত বিশেষ বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস হওয়ার পর জনমনে ধারণা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দিলেও আইনগত তেমন সমস্যা হবে না। এ কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি সংস্থার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিও তেমন ভূমিকা পালন করছেন না।
পাথরঘাটার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাবির হোসেন বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখা হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের ‘সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে’ এবং মা-বাবার সম্মতিতে যেকোনো ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়ের বিয়ে হতে পারবে। আর ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ নারীর বিবাহ মানেই তা বাল্যবিবাহ। বিশেষ ধারার সুযোগ নিয়ে অভিভাবকেরা প্রায়ই তাঁদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকেন। তাই এ বিশেষ ধারার কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে।
উপজেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনায় গঠিত উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটি কোনো কাজে আসছে না। এতে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি শাহ মো. কামরুল হুদা বলেন, সম্প্রতি তিন দিনে নয়টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। তারপরও বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অভিভাবকেরা সচেতন না হলে এভাবে প্রতিরোধে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।