এক বছরে অর্ধেক সাক্ষীও আসেনি

বখতিয়ার আলম
বখতিয়ার আলম

রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের ঘটনায় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় এক বছরে অর্ধেকেরও কম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১৪ জন। হাজির না হওয়ায় চার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন। এদিকে বখতিয়ারের জামিনের আবেদন নাকচ করে এই মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ২৮ মার্চ হাইকোর্ট এই আদেশ দেন।
বখতিয়ার সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে।
আদালত সূত্র বলেছে, হাইকোর্টের আদেশটি বিচারিক আদালতে পৌঁছেছে গত ১৬ এপ্রিল। ৭ মে সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য দিনে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় চার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তাঁরা হলেন বখতিয়ারের ব্যবহৃত গাড়ির চালক ইমরান ফকির এবং তিন বন্ধু কামাল মাহমুদ, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ও কামাল ওরফে টাইগার কামাল। তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে মদ্যপ অবস্থায় বখতিয়ার গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে রিকশাচালক হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। ওই ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় এ মামলা করেন। ৩১ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ারকে আটক করে পুলিশ। ওই বছরের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আদালত গত বছরের ৬ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই জোড়া খুন মামলার বিচারকাজ।
আদালত সূত্র বলেছে, এ মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ছিল গত বছরের ১১ মার্চ। কিন্তু সেদিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। ২৭ জুলাইও ধার্য দিনে কোনো সাক্ষী হাজির হননি। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ মার্চ পাঁচজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত বাদী মনোয়ারা বেগম ও ইয়াকুব আলীর স্ত্রী সালমা বেগমসহ সব মিলিয়ে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী গাড়িচালক ইমরান, বখতিয়ারের তিন বন্ধু কামাল, জাহাঙ্গীর ও টাইগার কামালসহ ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো বাকি। বাকি অন্য সাক্ষীদের মধ্যে আছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক দীপক কুমার দাস, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আ খ ম বদিউজ্জামান, সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারিক হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান, নুরু মিয়া, আমিনুল হক ও নির্বাহী হাকিম সারাহ সাদিয়া। সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে আগামী ১৫ জুন।
ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া ছয় মাস সময়সীমার মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সব সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হবে। হাইকোর্ট একই আদেশে বলেছেন, ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে আইনানুগভাবে আসামির জামিন আবেদন বিবেচনা করতে পারেন বিচারিক আদালত।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর বখতিয়ার কিডনি রোগ ও মেরুদণ্ডের সমস্যা জানিয়ে নিজ খরচায় কারাগার থেকে আরামদায়ক যানবাহনে আনার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তাঁকে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্র বলেছে, বখতিয়ারকে কয়েকবার অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে নেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী মনোয়ারা বেগম ও সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।