লাশ নদীতে ফেলতে বাধ্য হলেন বাবা!

গণপিটুনিতে নিহত হন ছেলে। এরপর এলাকাবাসী লাশের জানাজা ও দাফনে বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলের লাশ নদীতে ফেলে দিতে বলেন বাবা। ফেলেও দেওয়া হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায়।

নিহত যুবকের নাম হেলাল খাঁ (৩০)। বাবার নাম মোসলেম খাঁ। বছরখানেক আগে পরিবারটি পদ্মা নদীর পশ্চিম দিকে চরভদ্রাসন উপজেলার হরিমারপুর ইউনিয়নের জাকেরের সুরা ভাঙ্গা এলাকার কলকুঠিতে বাস করত। তবে বর্তমানে তারা পদ্মা নদীর পূর্ব পাড়ে ভগবানের চর এলাকায় বাস করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা গ্রামের বাবুল খাঁর একটি ইজিবাইক চুরি হয়। রাত তিনটার দিকে তিনজন ইজিবাইকটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। এলাকাবাসী ধাওয়া করে দুজনকে আটক করে। এ সময় গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই হেলালের মৃত্যু হয়। আরেকজনকে আহত অবস্থায় চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে চরভদ্রাসন থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হেলালের লাশ উদ্ধার করে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, লাশের ময়নাতদন্ত গতকাল শুক্রবার সম্পন্ন হয়। ওই দিন রাত আটটার দিকে লাশ গ্রহণ করেন হেলালের বাবা মোসলেম খাঁ ও মা শুকুরী বেগম।

শুকুরী বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা লাশ জানাজা ও দাফনের জন্য জাকেরের সুরা ভাঙ্গা এলাকায় নিয়ে যাই। কিন্তু এলাকার লোকজন স্থানীয় গোরস্থানে জানাজা পড়িয়ে দাফন করতে দেয়নি। ফলে হেলালের বাবা ক্ষুব্ধ হন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এলাকাবাসীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মোসলেম খাঁ বলেন, ‘আমার ছেলের যেহেতু দাফনের জায়গা হলো না, তাঁর লাশটি নদীতে ফেলে দাও।’ এ কথা শুনে এলাকার কয়েকজন সত্যি সত্যিই লাশটি পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে আজ সকালে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করে।

হরিমারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দিপু খাঁ বলেন, সকালে মিডিয়ার লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে নদী থেকে লাশটি তোলা হয়।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রামপ্রসাদ ভক্ত বলেন, ‘শনিবার সকালে আমরা জানতে পারি এলাকার লোকজন লাশ দাফনে সহযোগিতা করেনি এবং লাশটি নদীর পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আমরা লাশটির জানাজার ব্যবস্থা করে দুপুরে জাকেরের সুরা ভাঙ্গার মাথা এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করেছি।’