'জঙ্গি আস্তানা'য় ৪-৫ জন আছে: র‍্যাব

নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখার বাড়ির সামনে র‌্যাবের সতর্ক অবস্থান ছবিটি শনিবার রাত সোয়া এগারোটায় তোলা। ছবি: সুমন মোল্লা
নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখার বাড়ির সামনে র‌্যাবের সতর্ক অবস্থান ছবিটি শনিবার রাত সোয়া এগারোটায় তোলা। ছবি: সুমন মোল্লা

নরসিংদীর গাবতলীর উত্তরপাড়ায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বর্তমানে র‍্যাব ও পুলিশ আস্তানা সন্দেহে বাড়িটি ঘেরাও করে রেখেছে। বাড়ির ভেতর চার–পাঁচজন থাকতে পারে বলে র‍্যাব ধারণা করছে। বাড়িটির ৫০০ গজ এলাকাজুড়ে রাত ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিলেটে আতিয়া মহলে জঙ্গি অভিযানের পর জঙ্গিরা ঢাকার আশপাশে অবস্থান নিয়ে আছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু জঙ্গি নরসিংদীর গাবতলী এলাকায় অবস্থান করছে বলে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হই। এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ধারণা চার–পাঁচজন ভেতরে রয়েছে।’

রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক ব্যক্তি স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিয়ে জানায়, তার নাম মাসুদুর রহমান। সে স্থানীয় জামেয়া কাশেমিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। সেসহ বাড়িটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সালাউদ্দিন, নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র আবু জাফর, একই কলেজের ছাত্র বাছিরুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মসিউর রহমান আটকা পড়েছেন। ঘটনাস্থলে থাকা আজহার ইবনে মাহফুজ নামের এক ব্যক্তি জানান, গণমাধ্যমকর্মীকে ফোন দেওয়া মাসুদুর রহমান তাঁর শ্যালক। মাসুদুর রহমান ওই বাড়িতে জাফর নামের এক শিক্ষকের কাছে ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। জাফর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

এ বিষয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহামুদ বলেন, ওই ব্যক্তির দাবি বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। অভিযান চালানোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবাসী মইন উদ্দীনের টিনশেডের ওই বাড়ির চারপাশে আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। পুরো এলাকাটি র‍্যাব পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন।

একতলা এই বাড়ির মালিক দুবাইপ্রবাসী মইন উদ্দীন। দেখাশোনা করতেন তাঁর ভাই জাকারিয়া।

র‍্যাব ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িটির কাছেই নরসিংদী জামিয়া কাসেমিয়া নামে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। সালাউদ্দিন নামে একজন নিজেকে ওই মাদ্রাসার কামিল বর্ষের ছাত্র পরিচয় দিয়ে চলতি মাসের ৩ তারিখ বাড়িটি ভাড়া নেন। এরপর ওই বাড়িতে তিনিসহ চার-পাঁচজন থাকতে শুরু করেন।

র‍্যাব-১১–এর সিও লে. কর্নেল কামরুল হাসানের নেতৃত্বে র‍্যাব সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। কামরুল হাসান বলেন, নব্য জেএমবির পাঁচ–ছয়জনের একটি দল বাড়িতে অবস্থান করছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে বাড়িটির মালিকের ভাই জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। রাত নয়টার দিকে বাড়িটির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ডাকা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের একদল কর্মীকে। র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পুরোদমে অভিযান চালানো হবে।

এর আগেও জঙ্গি আত্মগোপন করেছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি নরসিংদীর শেখেরচর, মাধবদীর টাটাপাড়া ও বিরামপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

বাড়িটির পাশের দোকানি নুরুল ইসলাম জানান, বাড়িটির ভাড়াটেরা বয়সে তরুণ। কয়েকজনের দাড়ি রয়েছে। দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে আসতেন। ভাড়াটেরা দোকানিকে জানান, তাঁরা অবিবাহিত। এ কারণে চেষ্টা করেও এত দিন কোনো বাসা ভাড়া পাননি। শেষে এই বাড়ি ভাড়া পেয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ কে এম ফয়জুল হক জানান, অভিযানের সুবিধার্থে ঘটনাস্থলের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।