বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা

বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সারুলিয়ার পশ্চিম ধামৈল এলাকার এই সড়ক। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সারুলিয়ার পশ্চিম ধামৈল এলাকার এই সড়ক। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

প্রথম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা আক্তার গত সপ্তাহে কয়েক দিন স্কুলে যেতে পারেনি। কারণ, তাদের ডেমরার পশ্চিম বামৈলপাড়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটুপানি জমে ছিল। কেবল তাহমিনা নয়, জলাবদ্ধতার কারণে ওই সময় স্কুলে যেতে পারেনি ওই এলাকার অনেক শিক্ষার্থী।

স্থানীয় লোকজন বলেন, বৃষ্টি হলে সারুলিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইউনিয়নের লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

জানতে চাইলে সারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনায় ভরে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া খালের জায়গা দখল করে কিছু কিছু এলাকায় দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। এতে খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি সরতে পারে না। যে কারণে বৃষ্টির পানিতে সারুলিয়া এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। তিনি বলেন, তাঁর ইউনিয়নে জনসংখ্যা আড়াই লাখ। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার দুই লাখ মানুষকে কোনো না কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে ডেমরার বামৈল পূর্বপাড়া, বামৈল পশ্চিমপাড়া, ডগার পূর্ব-পশ্চিম পাড়া, ডগার দক্ষিণ-উত্তরপাড়া, নতুনপাড়, পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর, নিঝুমবাগ, পশ্চিম টেংরা ও পশ্চিম হাজীনগর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা তলিয়ে আছে। এ ছাড়া কিছু বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।

বামৈল ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, তাঁর ছেলে সাকিব আদনান ডেমরার শামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। বৃষ্টি হলে তাঁর ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। কারণ, সামান্য বৃষ্টি হলেই তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় পানি জমে যায়। তাঁর ছেলের ক্লাস শুরু হয় সকাল সাতটায়। এত সকালে রিকশা পাওয়া যায় না। আবার হাঁটুসমান পানি ভেঙে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

ডগাই এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি হলেই সারুলিয়ার বড়ভাঙ্গা থেকে ডগাই পর্যন্ত পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রানীমহল থেকে ডেমরার ডগাই পর্যন্ত সড়কের অনেক জায়গায় পানি জমে আছে। কোনো কোনো জায়গায় হাঁটুপানি।

ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) আবদুল আওয়াল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলে ডিএনডি বাঁধসংলগ্ন সারুলিয়া-সিদ্ধিরগঞ্জের খালগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি ওই খাল দিয়ে ঠিকমতো সরতে পারছে না। এতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর পানিতে ডুবে যাচ্ছে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। শিগগিরই জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত বছর সারুলিয়াসহ আটটি ইউনিয়নকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনডি বাঁধসংলগ্ন সারুলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতা বড় ধরনের সমস্যা। লাখ লাখ মানুষ এর শিকার হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।