নতুন জীবন ফিরে পেলেন ফিস্টুলা আক্রান্ত মায়েরা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের এক মা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় মৃত সন্তান প্রসব করেন। প্রসবকালে পল্লি চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। দুই মাস পর ধরা পড়ে তাঁর ফিস্টুলা হয়েছে। গত ৫ মার্চ ওই নারীকে ভর্তি করা হয় কক্সবাজারের হোপ হাসপাতালে। ৩ এপ্রিল সেই হাসপাতালে তাঁর প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। ৫ মে হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। তিনি এখন সুস্থ হওয়ার পথে।

২৫ মে দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফিস্টুলায় আক্রান্ত আরও পাঁচজন নারীর সঙ্গে তিনি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। তিনজন নার্স রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ির ওই মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফিস্টুলায় অনেক যন্ত্রণা সইতে হয়। নারীরা পরিবারে অবহেলার শিকার হন। কিন্তু হোপ হাসপাতাল আমার পাশে ছিল। বিনা পয়সায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফিস্টুলা রোগ সারিয়ে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।’

 কক্সবাজার-টেকনাফ আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া রামু উপজেলার চেইন্দা এলাকায় ১২০ শতক জায়গায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি হোপ হাসপাতাল। হাসপাতালটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘হোপ ফাউন্ডেশন’। আর হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য অর্থায়ন করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফিস্টুলা ফাউন্ডেশন।

হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার ফেরদৌসুজ্জামান প্রথম আলোকেবলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকায় দরিদ্র মানুষজন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ফিস্টুলার মতো জটিল রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৩০৮ জন ফিস্টুলা আক্রান্ত মাকে নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের ফিস্টুলা ওয়ার্ডে ভর্তি ‘মা’ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ফিস্টুলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নৃন্ময় বিশ্বাস। ফিস্টুলার অস্ত্রোপচারও করেন তিনি। নৃন্ময় বিশ্বাস প্রথম আলোকেবলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এই হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফিস্টুলা রোগীদের এই হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। এই হাসপাতালে ফিস্টুলার চিকিৎসা হয় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে।

হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ফাহমিদা আক্তার বলেন, ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু হোপ হাসপাতাল সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এই রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে। ফিস্টুলা আক্রান্ত মায়েদের অধিকাংশ দরিদ্র হওয়ায় এত দিন তাঁদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই হাসপাতাল তাঁদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।