খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি নারীদের মিছিলে বাধা, লাঠিপেটা, ভাঙচুর

পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ২১তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়ে হাজারো মানুষ।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় মিছিলের জন্য সমবেত হন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ–সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের শতাধিক নেতা-কর্মী। মিছিলটি শুরু হওয়ার আগে পুলিশ এসে ব্যানার কেড়ে নেয়। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন তরুণী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সংঘর্ষের সময় নেতা-কর্মীরা পুলিশ ও বিজিবিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও গুলতি ছুড়ে মারেন। এতে পুলিশ ও বিজিবির কয়েকজন সদস্য আঘাত পান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চাইলে নারীদের ওপর হামলা চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয়। হামলায় সংগঠনের ১৪ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২১ জনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।

গতকাল বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নীতিশোভা চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিছিলে যোগ দেওয়া নারীদের মারধর করেছে। এমনকি স্বনির্ভর বাজারের পাশের গ্রামে ঢুকে দোকানপাট ও বাড়ি থেকে নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে।

অবশ্য খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে হঠাৎ স্বনির্ভর বাজারে সমাবেশ করার চেষ্টা করে ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। এই ঘটনার পর শহরে বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদরের ৩২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিজিবির কাছে সহযোগিতা চায়। বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরই ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ও গুলতি ছুড়তে থাকেন। এ সময় ইটপাটকেল ও গুলতির আঘাতে তিনজন বিজিবি সদস্যসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।

১৯৯৬ সালের ১১ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা। তাঁর অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধায় মিছিল পণ্ড হয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান বলেন, বেলা পৌনে একটায় মানিকছড়ির পিছলাতলা এলাকায় কাঁঠালবোঝাই একটি পিকআপে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

এ ছাড়া খাগড়াছড়ি-রামগড় সড়কে যৌথ খামার এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে দুপুরে সড়ক অবরোধ করা হয়। জেলার বিভিন্ন সড়কে চারটি বাস, ১২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, একটি পিকআপ, তিনটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয় এবং একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকায় বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।

খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফি বলেন, জেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনে আগুন, ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার দাবিতে পরিবহনশ্রমিকেরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে শহরে পরিবহনশ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এতে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে সকালে ঘটনাস্থল থেকে আটক ১৩ জন নেতা-কর্মীকে সন্ধ্যার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, আটক বাকি আটজনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করা হবে।