জীবিতকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন, ওসিকে তলব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁকে ২৩ জুলাই হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন বড় কুড়িপাইকা গ্রামের আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে আজাদ হোসেন ভূঁইয়া এ বছর হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন। আজাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আজাদকে মৃত দেখিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন পাঠায় পুলিশ। পুলিশের এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ১১ জুলাই একটি রিট আবেদন করেন আজাদ।

আজাদ হোসেন ভূঁইয়ার ভাষ্য, হজে যাওয়ার জন্য তিনি বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেন। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর পিআইডি নম্বর পান আজাদ। তাঁর পিআইডি নম্বর ০০৮০২৭২। কিন্তু আখাউড়া থানা-পুলিশ আজাদ হোসেনকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ায় তাঁর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

আজাদ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই থেকে আড়াই মাস আগে একদিন আখাউড়া থানা থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ আমাকে থানায় যেতে বলেন। কিন্তু আমি ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় ব্যস্ত থাকায় থানায় যেতে পারিনি। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পুলিশ প্রতিবেদনে জানতে পারি, আমাকে মৃত দেখিয়েছে পুলিশ।’

আজাদ অভিযোগ করে বলেন, পুলিশকে ‘সন্তুষ্ট’ না করতে না পারায় ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সম্পর্কে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তবে এসব মামলায় আমি জামিনে রয়েছি।’

হাইকোর্টে বাদীর আইনজীবী কায়সার জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ওসিকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আজ দুপুরে আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত জুন মাসে আজাদ হোসেন ভূঁইয়াকে মৃত দেখিয়ে পুলিশ একটি প্রতিবেদন পাঠায়। গত ২০ জুন ওয়েবসাইটে হজযাত্রীদের নামের তালিকায় আজাদ হোসেন ভূঁইয়ার নামের সঙ্গে ‘মৃত’ উল্লেখ ছিল। এ বিষয়ে থানার ওসির কাছে একটি ডিমান্ড আবেদন পাঠানো হয়েছিল। ওসি সেটি গ্রহণ করেছিলেন।

তৎকালীন আখাউড়া থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে কুমিল্লা দাউদকান্দি মডেল থানায় কর্মরত আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতির পাশাপাশি আজাদ বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করেন। এসব বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। বিষয়টি আমি থানার ওসি স্যারকে জানিয়েছি। আমি আজাদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রস্তুত করিনি। সেখানে আমার স্বাক্ষরও নেই। প্রতিবেদন আখাউড়া থানার ওসি দিয়েছেন।’

আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, ওই এলাকায় আজাদ হোসেন ভূঁইয়া নামের একজন মৃত ব্যক্তি ছিলেন। এ কারণে টাইপ করতে গিয়ে ভুলটি হয়েছে। তবে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে গত ৪ জুলাই সংশোধন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওসি বলেন, আজাদ হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।