জঙ্গিবাদের বিস্তার কমাতে তরুণদের ৩ পরামর্শ

নির্দিষ্ট কোনো একটি নয়, দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে তিনটি পদক্ষেপ দেখতে চায় তরুণেরা। এগুলো হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো ও বেকারত্ব কমিয়ে আনা। এ তিনটি বিষয়ে জোর দিলে জঙ্গিবাদ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলেই তারা মনে করছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে তরুণদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে। এতে অংশ নিয়ে এই তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথাই বলা হয়।

ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর গত এক বছরে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সামাজিক প্রতিরোধে বড় কোনো ঘটনা আর ঘটেনি। তবে এ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানা উদ্ধার হয়েছে, পুলিশের অভিযানে মারা পড়েছে কমপক্ষে ৭০ জঙ্গি। এত কিছুর পরও জঙ্গি হামলা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পুরোপুরি দূর হয়নি।

এ রকম এক অবস্থায় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে এককভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জরিপে। ২৬ শতাংশ তরুণ এ বিষয়ের পক্ষে মতামত দিয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামের তরুণেরা এর পক্ষে বেশি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ঠেকানোর পক্ষে বলেছে ২৫ শতাংশ তরুণ। এ বিষয়ে ছেলে-মেয়ে, শহর-গ্রামের তরুণদের অবস্থান প্রায় একই রকম। আর দারিদ্র্য কমিয়ে আনায় জোর দিয়েছে ২২ শতাংশ তরুণ।

তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্টার টেররিজম কমিটি বলছে, শুধু দমন-পীড়নের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে না। জঙ্গিবাদ উসকে দেয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এ তিনটি বিষয় ছাড়া জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ এসেছে তরুণদের কাছ থেকে। উত্তরদাতা ১০ শতাংশ তরুণের মতে, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের বাড়তি যত্ন ও খেয়াল জঙ্গিবাদের ভুল পথে যাওয়াকে আটকাতে পারে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া এবং জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে ১৫ শতাংশ তরুণ। এ ছাড়া দারিদ্র্য কমানো, ধর্মের অপব্যবহার রোধ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মতো বিষয়ে গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছে আরও ১৬ শতাংশ তরুণ। তাদের মতে, ঠিকভাবে এ কাজগুলো করা গেলে তা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। উত্তরদাতা ৭ শতাংশ তরুণ বলেছে, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আসলে কী করা উচিত, এ সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।

জরিপের আগের পর্বের বিষয় ছিল পরিবার। সেখানে জরিপে অংশ নিয়ে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণই বলেছে যে পরিবার ও বাবা-মায়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারাটাই তাদের জন্য সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। ছেলে বা মেয়ে—সবার জন্য এটি একটি বড় সমস্যা বলেই তরুণেরা উল্লেখ করেছে। এ থেকে বলা যায়, প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন তরুণই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা বোধ করে। পারিবারিক বন্ধন আলগা হওয়ায় বাড়ছে বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব। এই পর্বের জরিপে তরুণেরা আরও বলেছে, তারা জীবনের লক্ষ্য নিয়ে নিশ্চিত নয়। আবার লক্ষ্য ঠিক করতে পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় পথের নির্দেশও পাচ্ছে না। গুলশানের ঘটনার পর জঙ্গি হিসেবে ধরা পড়া তরুণদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করেও দেখা যাচ্ছে তারা প্রায় সবাই ছিল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। এরপরই তারা যুক্ত হয় জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তানদের জঙ্গি হওয়ার ক্ষেত্রে এমনটি বেশি দেখা গেছে।

 জঙ্গিবাদ ও কারণ

৭২% তরুণ–তরুণীরা জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন

৫৮% তরুণ–তরুণীরা বেকারত্ব ও ধর্মের ব্যবহারকে বড় কারণ মনে করে