কেশবপুরে খাল ইজারা, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় অর্পিত সম্পত্তির উন্মুক্ত বিল খুকশিয়ার সুতাখালী খালের প্রায় আধা কিলোমিটার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এলাকাবাসী খালটির ওই অংশের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। নৌকায়ও চলাচল করতে পারছে না। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে পারছেন না।

উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের কিসমত শানতলা গ্রামের মানুষের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় খুকশিয়া বিলের সঙ্গে শ্রীনদীর সংযোগ রক্ষাকারী সুতাখালী খাল। এর দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে গাজীর মোড় থেকে সকালের ঘাট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার ৫ একর ৯২ শতক চলতি বাংলা বছরের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশ উন্মুক্ত খাল হিসেবে রয়ে গেছে। ইজারা নিয়েছেন আড়ুয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন। তিনি খালে মাছ চাষ করছেন। এ কারণে তিনি সাধারণ মানুষকে খালের ওই অংশে নামতে দিচ্ছেন না। তবে উন্মুক্ত অংশ জনসাধারণ ব্যবহার করছে। বংশ পরম্পরায় এই খালে এলাকাবাসী মাছ ধরত। তাদের উৎপাদিত ফসল নৌকায় করে এই খাল দিয়ে বাড়ি আনত। খালটির ইজারা বাতিলের জন্য ১ জুন জেলা প্রশাসককে এবং কেশবপুরের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ৫ জুন এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন দেন। কিন্তু ইজারা বাতিল করা হয়নি।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শানতলা গাজীর মোড় থেকে চলে আসা সুতাখালী খালটি কালভার্টের মুখ থেকে সকাল ঘাট পর্যন্ত দুটি অংশে বাঁশের বেড়া, মোটা পলিথিন এবং বালুর বস্তা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

শানতলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ সরদার, শহিদুল ইসলাম ও মালেক মোড়ল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারি এই খালে ১২ মাস মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু এবার বৈশাখ থেকে এই খালে মাছ ধরতে পারছি না। আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন খালটি ইজারা দেওয়ায় আমরা অতি কষ্টে আছি।’

এলাকার বাসিন্দারা বলেন, গবাদিপশুর জন্য খাল পাড়ে ঘাস কাটতে গেলেও তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। সেচ মৌসুমে এই খালের পানি দিয়ে তাঁরা জমি চাষাবাদ করেন। কিন্তু ইজারা বাতিল না করলে এবার তাঁরা ফসলের আবাদ করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন। শানতলা ও কিসমত শানতলা গ্রামের পানি ওই খালে নামে। খালে বেড়া দিয়ে বাধা দেওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

ইজারাদার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো লোক কাউকে খালে নামতে বাধা দেন না। তা ছাড়া পাটা দেওয়ায় কোনোভাবে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আমাকে ইজারা দিয়েছে। আমি মাছ চাষ করেছি।’

কেশবপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কবীর হোসেন বলেন, এটি সরকারি খাল হিসেবে রেকর্ডভুক্ত নয়। এটি ছিল তৎকালীন জমিদারদের। পরে তাঁরা ভারত চলে যান। খালটি অর্পিত সম্পত্তির হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ইজারা বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।