ভরসা জরাজীর্ণ সাঁকো

জরাজীর্ণ এই সেতু দিয়ে চলাচল করে হাজারো মানুষ। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
জরাজীর্ণ এই সেতু দিয়ে চলাচল করে হাজারো মানুষ। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

রাজধানীর মিরপুরে একটি ওয়ার্ডের দুটি ব্লকের মধ্যে চলাচলের মাধ্যম একটি বাঁশের সাঁকো। এলাকাবাসী ঝুঁকি নিয়ে রোজ পার হয় জরাজীর্ণ সাঁকোটি। পা পিছলে গিয়ে সেখানে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

মিরপুরের ১০ নম্বরের ডি ব্লক এবং ১১ নম্বরের সি ব্লককে যুক্ত করেছে সাঁকোটি। সাঁকোর নিচ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে সরু বাইশটেকি খাল। খালটি ময়লা-আবর্জনায় ভরা।

সাঁকোর একপাশে ১০ নম্বরের ডি ব্লকের  অ্যাভিনিউ ১ এবং অন্যপাশে ১১ নম্বরের সি ব্লকের অ্যাভিনিউ ৫। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি ঝুটপট্টির শেষ মাথা নামে পরিচিত।

প্রতিদিনকার যাতায়াতের ভোগান্তি কমাতে স্থানীয় লোকজন সেখানে কালভার্ট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হওয়ায় সেটি করা যাচ্ছে না।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকোটি দিয়ে নানান বয়সী মানুষ চলাচল করছে। রাস্তা থেকে কিছুটা উঁচু হওয়ায় সাঁকোতে উঠতে শিশু-বয়স্ক নারীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে পার হচ্ছেন। মাঝে মাঝে সাঁকোর ওপরে মানুষের জটও লেগে যাচ্ছে।

ব্লক দুটির বাসিন্দারা বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে সাঁকোটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় শিশুদের।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বারেক বলেন, ‘বিষ্টি হইলেই হাক্কা ডুইব্যা যায়। তহন ভিইজ্যা-পুইড়্যা পার হই। পোলাপান ইশকুলে যাইতে চায় না।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বর্ষাকালে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ খালে পড়ে যায়।

সাঁকো-সংলগ্ন সি ব্লকের সংযোগ সড়কের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে ডি ব্লকের রাস্তা ভাঙাচোরা, বড় বড় গর্ত, রাস্তাজুড়ে ভাঙা ইট।

গতকাল হঠাৎ সাঁকোর ওপর ‘পইড়্যা গ্যাছে, পইড়্যা গ্যাছে’ শোরগোল শোনা যায়। এগিয়ে গিয়ে জানা যায়, একজন নারী ফোনে কথা বলতে বলতে সাঁকো পার হচ্ছিলেন। আরেক পথচারীর ধাক্কায় ফোনটি নিচের খালে পড়ে যায়। ওই নারী কিছুক্ষণ খালের দিকে তাকিয়ে চলে যান।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডি ব্লকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা বেশি। অন্যদিকে, সি ব্লক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে হাজারো মানুষ এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। ২৫ বছর ধরে এভাবে চলছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মেঘনা আক্তার। মেঘনার বাসা সি ব্লকে। আর স্কুল ডি ব্লকে। প্রতিদিন তাকে এক ঘণ্টা হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হয়। মেঘনা বলে, ‘এখানে রাস্তা থাকলে রিকশাতে স্কুলে যেতে পারতাম।’

তবে অনেকটা ঘুরপথে দুটি ব্লকে আসা-যাওয়া করা যায়। এতে সময়ের পাশাপাশি যাতায়াত খরচ অনেক বেশি পড়ে।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতিবছর তাঁরা কাউন্সিলরের কাছে ধরনা দেন। কাউন্সিলর বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। গত বছর মেয়র নিজে ঘুরে এই দুই ব্লকের মানুষের দুর্দশা দেখে গেছেন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, নিজেদের প্রয়োজনে ও মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল নিজ খরচে সাঁকোটি মেরামত করে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘কমিশনার-মেয়র আমাগো কষ্টের কতা সব জানে। কিচ্ছু করে না।’

বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়ে অবগত আছেন উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, কালভার্ট তৈরির প্রকল্প পাস করা আছে। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ওয়াসা জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।