নালার বর্জ্য গলিতে

পশ্চিম তেজতুরী বাজারের ছন্দ-আনন্দ সিনেমা হলের পাশের গলিতে নালার বর্জ্য তুলে এভাবে সড়কের ওপর রাখা হয়েছে। গত শনিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
পশ্চিম তেজতুরী বাজারের ছন্দ-আনন্দ সিনেমা হলের পাশের গলিতে নালার বর্জ্য তুলে এভাবে সড়কের ওপর রাখা হয়েছে। গত শনিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

সড়কে ছড়িয়ে আছে বর্জ্য-নোংরা পানি। বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। তা থেকে বাঁচতে পথচারীরা নাক চেপে গলিতে ঢুকছেন, আর গলি শেষ হওয়ার পর নাক ছাড়ছেন।

পশ্চিম তেজতুরী বাজারের আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হলের পেছনের গলিতে গিয়ে গত রোববার দেখা যায় এ দৃশ্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রোববার নালা থেকে বর্জ্য তুলে সেগুলো গলিতেই ফেলে রেখে গেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পথচারী রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাজ ছিল ড্রেন পরিষ্কার করা। এরপর ওই সব বর্জ্যের কী ব্যবস্থা হবে, তা দেখার দরকার নেই! সেগুলো রাস্তার ওপর পড়ে থাকুক বা দুর্গন্ধ ছড়াক কিংবা পরিবেশদূষণ করুক! আমাদের যা খুশি হোক! তাদের কিছুই আসে যায় না!’

রোববার দেখা যায়, পশ্চিম তেজতুরী বাজার জামে মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে দক্ষিণ দিকে যাওয়া গলির মুখেই নালার পানি জমে আছে। কিছুদূর পরপর নালা থেকে ওঠানো আবর্জনা স্তূপ করে রাখা। গলিতে জমে আছে নোংরা পানি। সেখানে মাছি ভনভন করছে।

পথচারীদের চলার জন্য গলিতে সারিবদ্ধভাবে ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ইটের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে আসা দুই শিক্ষার্থী আবিদ রহমান ও সুমাইয়া তানজিল। সুমাইয়া বলেন, ‘পুরো রাস্তা শুকনা, কিন্তু এই রাস্তায় এসে ড্রেনের ময়লা আর নোংরা পানিতে পা ফেলে পার হতে হচ্ছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা রাস্তায় ফেলে রাখা হয় কেন?’

আরেকজন পথচারী বলেন, ‘গন্ধে নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। গায়ে-পায়ে ময়লা মেখে হাঁটতে হচ্ছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব কার?’

এই গলিতে বাড়ি আমেনা বেগমের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের (সিটি করপোরেশন) লোকজন এসে ড্রেন পরিষ্কার করে গেছে। এ জন্য আমরাই বিল দিই। কিন্তু তারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে না। কিছুদিন পরপর ড্রেন ভরে যায়। এভাবে রাস্তার ওপর ফেলে রাখে।’ তিনি বলেন, বৃষ্টি এলে গলির মুখে দু-তিন ঘণ্টা পানি জমে থাকে।

গলিতে ফেলে রাখা আবর্জনা কখন পরিষ্কার করা হবে, সে পর্যন্ত বসে থাকার সময় নেই লরেন্স গোমেজের। এই গলিতেই তাঁর বাসা, আর বাসার সামনেই দোকান ফিলোমিনা জেনারেল স্টোর। তিনি এক হাতে ঝাড়ু আর আরেক হাতে বালতিতে করে পানি নিয়ে দোকানের সামনের সড়কটি পরিষ্কার করার কাজে নেমে গেছেন।

কেন নিজেই সড়ক পরিষ্কার করছেন? জানতে চাইলে লরেন্স গোমেজ বলেন, ‘দোকান খুলতে হবে। এ রকম নোংরায় মানুষ আসবে কীভাবে?’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৫) সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘নালা পরিষ্কার করা মূলত ওয়াসার দায়িত্বে পড়ে। তারা দায়িত্ব পালন করছে না বলে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। ওয়াসার কাজটি সিটি করপোরেশন করছে, কারণ করপোরেশনের দায়িত্ব বেশি। আমরা ঠিকাদারের মাধ্যমে নালা পরিষ্কারের কাজটি করছি।’ তিনি বলেন, ‘ময়লাগুলো তরল, এ কারণে সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া যায় না। দু-এক দিনের মধ্যে এগুলো সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করে নিয়ে যাবে।’