দুজন পরিবারবিচ্ছিন্ন, দুজন ছিলেন নিখোঁজ

আশুলিয়ায় র‍্যাবের অভিযানে গত রোববার আটক চারজনের মধ্যে দুজন কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে থানায় জিডি করেছিল তাঁদের পরিবার। আর বাকি দুজনের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে পরিবারের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না।

আদালত প্রতিবেদক জানান, গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে চারজনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাইরুস তাসনিন প্রত্যেককে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

আশুলিয়ার চৌরাপাড়া গ্রামে গত শনিবার রাত ১টা থেকে ১১ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে র‍্যাব জঙ্গি সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন মোজাম্মেল হক, রাশেদুন্নবী, ইরফানুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন। এদিকে গত রোববার অভিযানের পর গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িটি ঘিরে রেখে তল্লাশি চালায় র‍্যাব। ওই বাড়ি থেকে দুটি পিস্তল, আটটি গুলি, গুলির ছয়টি খোসা, জিহাদি বই, ল্যাপটপ, ভিডিও সিডি, তিনটি বোমা ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। র‌্যাবই দুটি মামলা তদন্ত করবে।

র‌্যাব-৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার অনু মং বলেন, গ্রেপ্তার চার জঙ্গির বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। ওই সব মামলাসহ গতকালের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ইরফানুল ও রাশিদুন্নবী কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তাঁদের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করেন স্বজনেরা।

কোচিংয়ে ভর্তির কথা বলে বের হন ইরফানুল

হাটহাজারী রাউজান প্রতিনিধি জানান, ইরফানুল ওরফে সুফিয়ানের বাবা রফিকুল ইসলাম সৌদিপ্রবাসী ব্যবসায়ী। সাত বছর আগে থেকে হাটহাজারী সদরে ভাড়া বাসায় থাকে তাঁদের পরিবার। গতকাল বিকেলে হাটহাজারীতে ইরফানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তারের খবর শুনে মা শামসুন নাহার পাগলপ্রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত ২ মে দুপুরে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেন ইরফান। ওই টাকা ও ব্যবহৃত ল্যাপটপ নিয়ে বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকেই তাঁর খোঁজ নেই। পরে শামসুন নাহার হাটহাজারী থানায় একটি জিডি করেন। তিন ভাই এক বোনের মধে৵ দ্বিতীয় ইরফান। গত বছর এইচএসসি পাস করেন।

বগুড়ায় যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ রাশিদুন্নবী

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ উদাখালী গ্রামের হোমিও চিকিৎসক রেজাউল করিমের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে রাশিদুন্নবী চতুর্থ। ২০১৪ সালে এসএসসি পাসের পর তিনি প্যাথলজি বিষয়ে বগুড়া সাইক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজিতে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র।

বাবা রেজাউল করিম সোমবার বিকেলে বলেন, রাশিদুন্নবী বগুড়ার একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করতেন। গত ২৭ এপ্রিল বাড়ি এসে ১ মে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে বগুড়ায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়েন। পরদিন তাঁর কলেজ থেকে ফোন করে বলা হয়, রাশিদ পরীক্ষায় অনুপস্থিত। ওই দিনই তিনি বগুড়ায় গিয়ে প্রথমে কলেজে ও পরে তাঁর মেসে খোঁজ নেন। মেসের মালিক জানান, দুজন অপরিচিত ছেলে রাশিদের সঙ্গে কদিন ধরে মেসে থাকত। মেসমালিক বাধা দেওয়ায় তারা অন্য মেসে চলে যায়। পরে ২২ মে বগুড়া থানায় জিডি করেন তিনি।

পরিবারবিচ্ছিন্ন ছিলেন মোজাম্মেল

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, পরিবারের সঙ্গে ছয় মাস ধরে যোগাযোগ ছিল না মোজ্জামেল হক ওরফে মাসুদের। এমনিক গত ঈদেও
তিনি বাড়িতে যাননি। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের সানকিভাঙা গ্রামে। গতকাল মোক্ষপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম এবং একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মোতালেবের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানান, মোজ্জামেল হক ত্রিশালে মাদ্রাসায় পড়েছেন। পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি মাদ্রাসায় পড়েছেন। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব কম ছিল। মাদ্রাসায় পড়ার সময় হঠাৎ হঠাৎ তিনি বাড়ি যেতেন।

পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় যোগাযোগ নেই আলমগীরের

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের কৃষ্ণনগরের দরিদ্র কৃষক আবদুল মান্নানের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে আলমগীর হোসেন তৃতীয়। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা আলমগীর গত বছর চাকরির খোঁজে ঢাকায় আসেন। এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কম। গত মার্চ মাসে বাড়িতে গিয়েছিলেন। দেড় মাস আগে বাবা মান্নানকে ফোন করেছিলেন।