তথ্য পেতেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্ভরতা

যেকোনো দেশে সংবাদ ও তথ্য পাওয়ার মূল উৎস হলো গণমাধ্যম। মূল উৎস গণমাধ্যম হলেও তরুণেরা সংবাদ ও তথ্যের জন্য এখন অনেকাংশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। তরুণদের মতে, এটি এখন তাদের তথ্য পাওয়ার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

প্রথম আলোর জরিপে তরুণদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন মাধ্যম থেকে তারা সবচেয়ে বেশি তথ্য পায়। উত্তরে ৪০ শতাংশ তরুণ বলেছে, সংবাদ ও বিভিন্ন তথ্য পেতে তাদের কাছে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এ ক্ষেত্রে তরুণদের প্রথম পছন্দ হলো টেলিভিশন, দ্বিতীয় হলো বন্ধুবান্ধব। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাপা পত্রিকা আছে চতুর্থ স্থানে। অনলাইন সংবাদপত্র আছে নবম স্থানে। অর্থাৎ তরুণেরা তথ্য পেতে সংবাদপত্রের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

তথ্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি নির্ভরশীলতার বিষয়টি সারা বিশ্বেই বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা এখন সংবাদ পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর। এসব দেশে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টেলিভিশন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ২৬টি দেশের ৫০ হাজার তরুণের মতামতের ভিত্তিতে এ জরিপ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের ২০১৬ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৬ জনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদ বা তথ্য পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মূলত নির্ভর করে ফেসবুক, টুইটার ও রেডডিটের ওপর। দেশটিতে ফেসবুক থেকে তথ্য পায় ৬৬ শতাংশ মানুষ।

প্রথম আলোর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশেও তথ্য পেতে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। এই প্রবণতা গ্রামের চেয়ে শহুরে তরুণদের মধ্যে বেশি। শহরে ৫৩ শতাংশ তরুণ এসব মাধ্যম থেকে তথ্য পায়, গ্রামে এ হার ৩৫ শতাংশ। আবার মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এগুলো থেকে বেশি খবর সংগ্রহ করে। ৫৮ শতাংশ ছেলে ও ২২ শতাংশ মেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য পায়। অর্থাৎ মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা দ্বিগুণ তথ্য বা খবর এসব মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে।

ঢাকা বিভাগের তরুণেরা তথ্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এ বিভাগের ৫৪ শতাংশ তরুণ এগুলো থেকে তথ্য পায়। এই প্রবণতা সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে, ২৪ শতাংশ। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগেও এ প্রবণতা বেশ কম, যথাক্রমে ৩২ ও ৩১ শতাংশ।

নিয়মিত শিক্ষার্থীরা তথ্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভর করে। তাদের মধ্যে এসব মাধ্যম ব্যবহারের হার ৬২ শতাংশ। শিক্ষাজীবনে যারা নেই, তাদের ক্ষেত্রে এ হার অর্ধেকেরও কম, ২৮ শতাংশ। বিবাহিত ও অবিবাহিত তরুণদের মধ্যেও এ পার্থক্য একই রকম।

নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া তরুণদের ৯৯ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য পায়। স্নাতক বা উচ্চতর পর্যায়ে পড়ালেখা করা তরুণদের মধ্যেও এ প্রবণতা বেশি। পেশাগত অবস্থানের ভিত্তিতে বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও বেকার তরুণেরা তথ্য পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের মতো ভারতের তরুণেরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম–নির্ভর হয়ে পড়ছে। ভারতের ফোর্টিস ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশটির ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৭৫ শতাংশ তথ্য ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ জানতে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর। এসব মাধ্যম ভারতের তরুণদের জীবনযাপন, কেনাকাটা, ফ্যাশনের মতো বিষয়েও অনেক বেশি প্রভাব রাখছে।