নির্যাতন সইতে না পেরে এসআইয়ের স্ত্রীর আত্মহত্যা?

গাইবান্ধা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশিষ সাহার স্ত্রী লাবণী সাহা (৩০) গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রেনের নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের গাইবান্ধা সদর উপজেলার রাধাকৃঞ্চপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরিবারের দাবি, লাবণী স্বামী এসআই দেবাশিষ সাহার নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া রেলওয়ে থানা-পুলিশ ও লাবণীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দেবাশিষের বাড়ি কুড়িগ্রাম শহরের বৈরাগিপাড়া এলাকায়। গত মার্চ মাসে দেবাশিষের সঙ্গে একই জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শহরের গোবিন্দচন্দ্র সাহার মেয়ে লাবণীর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১২ লাখ টাকাসহ প্রায় ২০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। চাকরির কারণে দেবাশিষ স্ত্রী লাবণীকে নিয়ে গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরাতন হাসপাতাল লেনের ভাড়া বাসায় থাকতেন।
লাবণীর বাবা গোবিন্দচন্দ্র সাহা বলেন, ‘দেবাশিষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। সেখানে একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটির বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। পরকীয়া প্রেম নিয়ে বিয়ের পর থেকে দেবাশিষের সঙ্গে আমার মেয়ের দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রায়ই তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও তাকে মারধর করা হতো। আমার মেয়ে আমাকে প্রায়ই অভিযোগ দিত যে দেবাশিষ ওই মেয়েটিকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে লাবণীর অনুমতি চায়। অনুমতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। কয়েক দিন ধরে তার ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। গতকাল সকালে মারধরের পর তাকে গাইবান্ধার ভাড়া বাসার ঘরে তালাবদ্ধ করে দেবাশিষ থানায় যায়। পরে লাবণী মুঠোফোনে তাঁর এক আত্মীয় ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তালা খুলে থানায় যায়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর লাবণী অভিমান করে রেললাইনে যায়। মূলত স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
বোনারপাড়া রেলওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে লাবণী রেললাইনের ওপর হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন গাইবান্ধা রেলস্টেশনের অদূরে রাধাকৃষ্ণ এলাকায় পৌঁছালে লাবণী রেললাইনের ওপর লাফিয়ে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় আলামত হিসেবে লাবণীর একটি অ্যানড্রয়েড মুঠোফোন, একটি পার্টস, সোনার চেইন উদ্ধার করা হয়।
সদর থানার ওসি খান মো. শাহারিয়ার বলেন, লাবণী কেন, কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে এসআই দেবাশিষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ।