৫৭ কিলোমিটারে নরকযন্ত্রণা

বরগুনা-বাকেরগঞ্জ-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের বরগুনা থেকে গলাচিপা পর্যন্ত সড়কের ভাঙাচোরা দশা। ছবিটি সম্প্রতি গৌরিচন্না থেকে তোলা l প্রথম আলো
বরগুনা-বাকেরগঞ্জ-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের বরগুনা থেকে গলাচিপা পর্যন্ত সড়কের ভাঙাচোরা দশা। ছবিটি সম্প্রতি গৌরিচন্না থেকে তোলা l প্রথম আলো

বরগুনা থেকে বাকেরগঞ্জ হয়ে বরিশালের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ থেকে বরগুনা পর্যন্ত অপ্রশস্ত ও বেহাল ৫৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তহবিল থেকে ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর অনুকূলে এক বছর আগে এই সড়কের কাজ শুরু হলেও কাজে ধীরগতির কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি কমছে না। বর্তমানে এই সড়কের অনেক স্থানের অবস্থা এতটাই বেহাল যে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বরগুনা ও বরিশাল দুই জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, বৃষ্টির কারণে কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো সড়কের কাজ শতভাগ শেষ হয়ে যাবে।

বরিশাল ও বরগুনা সওজ সূত্র জানায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে বরগুনার দূরত্ব ৫৭ কিলোমিটার। এই ৫৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার বরগুনা সওজের এবং বাকি ১২ কিলোমিটার বরিশাল সওজের আওতায়।

সওজ প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনা সওজের আওতায় ৪৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য পাঁচটি গুচ্ছে ভাগ করে এই কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে চারটি গুচ্ছের দরপত্র-প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের মে মাসে কাজের অনুকূলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বাকি একটি গুচ্ছের দরপত্র-প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের মে মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পাঁচটি গুচ্ছে এই প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। আর বরিশাল সওজের আওতায় ১২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি গুচ্ছের কাজের অনুকূলে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ বছরের জুনে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনা অংশের রানীপুর থেকে গলাচিপা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ মাস দুয়েক আগে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ঝাটিবুনিয়া থেকে কাঁঠালতলী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দুপাশ প্রশস্ত করে ইট-পাথরের ভিত (সাববেইজ) নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলেও তার ওপর পাথর-বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হয়নি। বাকি ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ কিলোমিটারে কোথাও দুপাশ বর্ধিত করার জন্য বেড কেটে ফেলে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও কাজই ধরা হয়নি। ১০ কিলোমিটারে কার্যাদেশ দেওয়ার আড়াই মাস পার হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। এই ১০ কিলোমিটার হচ্ছে গলাচিপা থেকে বরগুনা পর্যন্ত। বর্তমানে সড়কের এই অংশ এতটাই বেহাল যে এখন তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এই সড়কে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই সড়কে আটকা পড়ছে এ পথে চলাচলকারী বাস ও অন্যান্য যানবাহন। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

একইভাবে বরিশাল সওজের আওতায় ১২ কিলোমিটারের কাজ শুরু হলেও তাতে গতি নেই। কোথাও দুপাশ বর্ধিত করার জন্য ফেলে রাখা হয়েছে আবার কোথাও কাজ শুরু হয়নি। ফলে ওই অংশের পাদ্রিশিবপুর, বাকেরগঞ্জ এলাকার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে।

বরগুনা ও বরিশাল অংশে দুটি গুচ্ছের কাজ পাওয়া বরিশালের ঠিকাদার মাহফুজ খান দাবি করেন, ‘বরগুনা অংশে ১০ কিলোমিটার কাজ আমি নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শেষে করেছি। এখন বরিশাল অংশেও কাজ চলছে। কাজে কোনো ধীরগতি নেই।’

যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের ভাষ্য, এই পথ দিয়ে ঢাকায় প্রতিদিন বরগুনা থেকে ২৮টি, পটুয়াখালীর সুবিদখালী, কাঁঠালতলী থেকে আরও অন্তত ২০টি দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কয়েক শ বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে।

বাসচালক রেজাউল করিম বলেন, বরগুনা-বাকেরগঞ্জ-বরিশাল সড়কের কাজ শুরু হলেও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানবাহন চালাতে সমস্যা হচ্ছে। কিছু জায়গায় কাজ ফেলে রাখায় সেসব স্থানের অবস্থা ভয়াবহ। বিশেষ করে বরগুনা থেকে গলাচিপা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। প্রায়ই বাস খাদে আটকা পড়ে থাকে।

সওজ বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ আলী বলেন, সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। এতে যাত্রী ও চালকদের খুব বিড়ম্বনা হচ্ছে এটা ঠিক। কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লাগাতার বৃষ্টির কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পিচের জন্য পানি খুব ক্ষতিকারক। এ জন্য দেরি হচ্ছে। আর সবচেয়ে খারাপ ১০ কিলোমিটারেও অচিরেই কাজ শুরু হবে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো সড়কের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’

সওজ বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এইচ গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের ওই অংশ আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমরা ঠিক করে ফেলব।’