সব সড়কই খানাখন্দে ভরা

খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার সিঅ্যান্ডবি রোড। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার সিঅ্যান্ডবি রোড। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

পিচ ও খোয়া উঠে টাঙ্গাইল পৌরসভার সব কটি সড়কই খানাখন্দে ভরে গেছে। কোনো কোনো সড়কে বিটুমিন-পাথরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। একটু বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তা কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।

শহরবাসী বলছেন, দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এসব সড়ক মেরামত করা হয়নি। এ কারণে সড়কে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।

আলী হোসেন নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, টাঙ্গাইল পৌর এলাকার রাস্তা থেকে উপজেলা পর্যায়ে গ্রামের রাস্তাও অনেক ভালো। পৌর এলাকায় চালাতে গিয়ে অটোরিকশার অনেক যন্ত্রাংশ ভেঙে ক্ষতির শিকার হতে হয়।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩১ দশমিক ৯৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের টাঙ্গাইল পৌরসভায় মোট সড়কের পরিমাণ ৩৫২ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৭৪ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পাকা, ৪৩ দশমিক ১৭ কিলোমিটারঢালাই রাস্তা, ১৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার ইটের রাস্তা ও বাকি ১২১ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। এসব সড়কের প্রতিটিই ভাঙাচোরা। এর মধ্যে দু-একটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) টাঙ্গাইল শাখার সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু রানী প্রামাণিক বলেন, পৌরসভার প্রতিটি রাস্তাই বেহাল। পথ চলতে জনগণের দুর্ভোগের সীমা নেই। কিন্তু পৌরসভার এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

সম্প্রতি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একটি ভালো রাস্তাও চোখে পড়েনি। এ সময় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল রাজ্জাক বলেন, নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে রাস্তাগুলোর অতি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বেবিস্ট্যান্ড থেকে কলেজপাড়া হয়ে আকুরটাকুর বটতলা পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের কান্দাপাড়া, দীঘুলিয়া মোড়, কলেজপাড়া, পার্ক বাজার এলাকাসহ প্রায় পুরোটিতেই বিটুমিন উঠে গেছে। এসব এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের।

কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহ আজিজ বলেন, তাঁদের এলাকার রাস্তা এতই খারাপ যে বাসা পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। অন্য জায়গায় গাড়ি রেখে বাসায় ফিরতে হয়।

মূল শহরের কালীবাড়ি সড়ক, মসজিদ, থানাপাড়া প্রিন্স, দীঘুলিয়া, বেড়াডোমা, ক্লাব, বিন্দুবাসিনী গার্লস স্কুল থেকে ছোট কালীবাড়ি এবং রেজিস্ট্রিপাড়া, জেলা সদর এলাকার কোর্ট, ডিসি অফিস, সাবালিয়া ও কোদালিয়া এলাকার হাসপাতালের আশপাশ, বেতকা মুন্সিপাড়া সড়কসহ প্রতিটি রাস্তাই খানাখন্দে ভরা।

সাবালিয়া এলাকার হামিদুর রহমান বলেন, রিকশায় চলতে গিয়ে ভাঙা রাস্তার কারণে ঝাঁকুনিতে দম বের হয়ে আসে। এরপরও রাস্তা সংস্কারে পৌরসভার কোনো উদ্যোগ নেই।

থানাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রিন্স রোড ডুবে আছে নোংরা পানিতে। শহরের কেন্দ্রস্থলের এ এলাকাতেই বাস পৌর মেয়র ও প্যানেল মেয়রের। এ এলাকার অধিবাসী শহিদুল ইসলাম বলেন, বছরের চার মাসই এ রাস্তা থাকে এ অবস্থায়। দেখার কেউ নেই।

জেলা সদর আদালত এলাকার রাস্তাও ভাঙাচোরা। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে রাস্তায়। আদালতে আসা হেকমত আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, জেলার সব অফিস আদালত এই এলাকায়। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটির রাস্তার অবস্থা এমন বেহাল।

বিশ্বাস বেতকা এলাকার গৃহবধূ মিলি রহমান বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ায় রিকশা ভাড়া ৫০ ভাগেরও বেশি বেড়ে গেছে। ফলে সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা আরিফ বলেন, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল গভর্নেন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্পের (এমজিএসপি) আওতায় বেশ কয়েকটি রাস্তার উন্নয়ন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাস্তার টেন্ডারের প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সময় পৌর এলাকার কোথাও উন্নয়নকাজ হয়নি। এ কারণে অনেক কাজই বর্তমান পরিষদ করতে শুরু করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই ভাঙাচোরা রাস্তা ও ড্রেনের কাজ করা হবে।