'ইটের সলিং' দিয়ে যেনতেন সংস্কার

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে এ রকম বড় বড় খানাখন্দ হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। ছবিটি গত বুধবার ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ সেতুর পাশ থেকে তোলা l এহসান-উদ-দৌলা
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে এ রকম বড় বড় খানাখন্দ হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। ছবিটি গত বুধবার ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ সেতুর পাশ থেকে তোলা l এহসান-উদ-দৌলা

যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের বেহাল অংশ যেনতেনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। সড়কটির অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত পাথরের কুচি ও পিচ দিয়ে সমান করা হচ্ছে। আর যেসব অংশ বেশি খারাপ, বিটুমিন উঠে গেছে, সেখানে ইট বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সংস্কারকাজের জন্য মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া, পুলেরহাট ও ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ সেতুর দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটারের পুনর্নির্মাণের জন্য ৩২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। বৃষ্টির কারণে সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ হয়েছে। সড়কটির খানাখন্দের অংশে ইট ফেলে চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটারে ওভারলে (বিটুমিনের আস্তরণ) সংস্কারকাজ করা হয়। তখন নিম্নমানের পাথরের কুচি ও বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। সংস্কারের এক বছর না যেতেই মহাসড়কের ওই অংশের কয়েকটি জায়গার বিটুমিন উঠে বেহাল হয়ে যায়। এরপর থেকে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে মহাসড়কে যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক রাখা হয়েছে। যশোরের পদ্মা অ্যাসোসিয়েট নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারকাজ করেছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর শহরের চাঁচড়া ডাল মিল এলাকায় রাস্তার মধ্যে অর্ধেক অংশ কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কালভার্টের দুই পাশে অন্তত আধা কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পুলেরহাট বাজার। সেখানে সড়কের অর্ধেকটা বন্ধ করে শ্রমিকেরা ইট বিছানোর কাজ করছেন। সড়কের এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ওই ১০০ মিটার পারাপারের সময় এক প্রান্তের যানবাহন আটকে অন্য প্রান্তের যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলেরহাট বাজার থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের অনেক স্থানে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে ছোট-বড়
অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পাথর ও পিচ দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঝিকরগাছা উপজেলা সদরে কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশের আধা কিলোমিটার এলাকা। সেতুর দুই পাশে বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুটির পাটাতনে ফাটল দেখা দিয়েছে। যানবাহনের চালকেরা ধীরে ধীরে সেতু পারাপার হচ্ছেন। এতে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

আনোয়ার হোসেন নামের পণ্যবাহী ট্রাকের একজন চালক বলেন, রাস্তা এতটাই খারাপ, স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। ট্রাকের যন্ত্রাংশ প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকাগামী সংগ্রাম পরিবহনের একটি বাসের চালক রিপন হোসেন বলেন, নাভারণ মোড় থেকে যশোর পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার আসতে এখন সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আগে সময় লাগত ৪০-৪৫ মিনিট। ধীরে ধীরে বাস চালাতে হচ্ছে। রাস্তার কাজ চলায় ঝিকরগাছা ও পুলেরহাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দর দেশের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম ক্ষেত্র। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির একমাত্র সড়কটি বেহাল। সড়কের উন্নয়ন না হলে বন্দরের উন্নয়ন হবে না। এতে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।

যশোর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি চার লেন এখনই হচ্ছে না। সড়ক পুনর্নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবে ছিল, সড়কের দুই পাশের পুরোনো গাছগুলো কেটে ৫ ফুট করে ২৪ ফুটের মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। পরে গাছগুলো না কেটে সড়ক পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কারণে সড়কের নকশা বদল করা হয়েছে। এতে প্রশস্ততা একটু কমে যাবে।