৩২০ শিল্প-কারখানার অনুমতি সুন্দরবনের জন্য সর্বনাশা সিদ্ধান্ত

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনের চারপাশে ৩২০ শিল্প-কারখানার বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সর্বনাশা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষায় এসব কারখানার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কমিটির নেতারা।

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। ‘সুন্দরবনের পাশে তিন শতাধিক নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনে অনুমোদন প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবিতে’ ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কমাল সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সুন্দরবন এলাকায় একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া সেখানে কোনো শিল্প স্থাপনা করা যাবে না বলে ইউনেসকো থেকে বলা হয়েছে। অথচ সরকার সেখানে এতগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে স্থাপনা করার অনুমোদন দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সময়ের দেওয়া বক্তব্য, ইউনেসকোর কাছে দেওয়া ওয়াদা, দেশীয় আইন—সবকিছুরই ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকার সুন্দরবনের জন্য এত বড় সর্বনাশা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন বিধ্বংসী ও পরিবেশবিরোধী এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধের জোর দাবি জানান তিনি।

গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা চাই, তবে সেটা হতে হবে পরিবেশ ও জনবান্ধব। অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে—তা সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের আরও উদ্বিগ্ন করল। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মÿহুমকির সম্মুখীন হবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থে সরকার ভুল পথে চলছে। সামান্য কিছু ব্যক্তির স্বার্থে বিশাল জনগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সরকার পরিবেশ ও সুন্দরবন রক্ষায় করা নিজের আইন ও ওয়াদা পদে পদে ভঙ্গ করছে। ইউনেসকোর ৪১তম সভার সিদ্ধান্তের ধারাগুলোকে তারা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ে ইউনেসকোর যে আপত্তি রয়েছে, সেখান থেকে সংস্থাটি সরে আসেনি; বরং সুন্দরবন রক্ষায় তারা আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এসব শর্ত সরকার মানলে সুন্দরবনের পাশে কোনোভাবেই শিল্প-কারখানার অনুমোদন দিতে পারে না।
জাতীয় কমিটি থেকে সুন্দরবন রক্ষায় মোট চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো ১. সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী বা অভ্যন্তরের নির্মাণাধীন ও পরিকল্পিত ৩২০টি বা সব সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প ও স্থাপনা অপসারণ, নির্মাণাধীন প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ, বরাদ্দ করা সব প্লট বাতিল করতে হবে; ২. সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেসকো কমিটির নেওয়া ১১টি প্রস্তাব হুবহু ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে; ৩. রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বিষয়ে সরকারি পরিবেশগত সমীক্ষা ও অন্যান্য প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ইউনেসকোর নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিবেশগত সমীক্ষা পরিচালনা করে নতুন স্থান নির্ধারণ করতে হবে; ৪. সুন্দরবনের ওপর সব অনিয়ম ও অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাজের পরিধি, একাগ্রতা, সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুল মতিন, সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স ও শরীফ জামিল।