মায়ের সামনে ছেলের এমন মৃত্যু!

একসঙ্গে দুই ছেলেকে নিয়ে এমন ছবি আর কোনো দিনই তুলতে পারবেন না মা। মা মিন্টু সরকারের কাছ থেকে বহু দূরে চলে গেছে বড় ছেলে জয়দীপ (ডানে) l ছবি: সংগৃহীত
একসঙ্গে দুই ছেলেকে নিয়ে এমন ছবি আর কোনো দিনই তুলতে পারবেন না মা। মা মিন্টু সরকারের কাছ থেকে বহু দূরে চলে গেছে বড় ছেলে জয়দীপ (ডানে) l ছবি: সংগৃহীত

স্কুলের লাইব্রেরিতে মায়ের পাশে বসে অঙ্ক করছিল শিশুটি। নাম জয়দীপ দত্ত। গতকাল অবশ্য তার স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাসায় কেউ না থাকায় মা-ই তাকে স্কুলে নিয়ে যায়। সে চট্টগ্রামের পাথরঘাটার সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তার মা মিন্টু সরকার এই স্কুলের শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ান (গ্রন্থাগারিক)। অঙ্ক করার সময় হঠাৎ লাইব্রেরির একটি বইয়ের আলমারি এসে পড়ে জয়দীপের ছোট্ট শরীরের ওপর।

হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারা যায় শিশুটি। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছিল শিশুটি। গতকাল রোববার বেলা দেড়টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

জয়দীপের বাবা দেবাশীষ দত্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মরিয়ম আশ্রম উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের হাজি কলোনি এলাকায় তাঁদের বাসা। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোরায়।

পরিবার জানায়, স্কুলে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। জয়দীপের অঙ্ক পরীক্ষা ছিল বুধবার।

সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার রিংকু লরেন্স কস্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেড়টার দিকে স্কুল শাখা ছুটি হয়। তখন লাইব্রেরি থেকে ছেলেরা একসঙ্গে বের হওয়ার সময় হঠাৎ একটি বইয়ের আলমারি জয়দীপের গায়ের ওপর পড়ে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি।

গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, একটি চেয়ারে বসে আছেন মা মিন্টু সরকার। তাঁকে তখনো জানানো হয়নি জয়দীপ আর নেই। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাঁকেও জরুরি বিভাগের ভেতরে নেওয়া হয়। ২০ মিনিট পর কিছুটা সুস্থ হলে তিনি বাইরে এসে আবার আগের চেয়ারে বসেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসা আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা কাঁদতে শুরু করলে কী ঘটেছে তা বোঝার আর বাকি ছিল না তাঁর। এ সময় নির্বাক বসে ছিল জয়দীপের ছোট ভাই দেবজিৎ দত্ত। সে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।

বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতালে ছুটে আসেন জয়দীপের দাদা তারাপদ দত্ত। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘ও নাতি রে, ও নাতি...। পূজাতে সবাই মিলে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। এখন আমি কাকে নিয়ে যাব।’

গতকাল রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়া জয়দীপের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে নগরের বলুয়ারদীঘিপাড় মহাশ্মশানে সৎকার করা হয়।