'গড়াই' এল 'পদ্মা'র বর হয়ে

ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে আনা পুরুষ ঘড়িয়ালটিকে গতকাল সকালে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানার পুকুরে ছাড়া হয় l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে আনা পুরুষ ঘড়িয়ালটিকে গতকাল সকালে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানার পুকুরে ছাড়া হয় l ছবি: প্রথম আলো

পদ্মার বয়স হয়েছে ৪০। এত দিন পর গড়াই এল তার বর হয়ে। রাজশাহীতে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গড়াইকে বরণ করা নিয়ে গতকাল রোববার রীতিমতো উৎসব হয়ে গেল। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পদ্মা-গড়াইকে এক জায়গায় করতে পেরে অতিথিদের মিষ্টিমুখ করাল। এ উৎসবে অতিথি হয়ে এসেছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় করে অতিথিরা উৎসবে মেতে উঠলেন।

এই ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ আসলে মিঠাপানির বিরল প্রজাতির কুমির, ঘড়িয়াল। এরা এখন বিলুপ্তির পথে। তাই এদের আবদ্ধ জায়গায় প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়ালকে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আনা হলো। রাজশাহী চিড়িয়াখানার পুকুরে মাদি ঘড়িয়ালের সঙ্গে জোড়া বেঁধে দেওয়ার সময় ঢাকা থেকে আনা পুরুষ ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হলো ‘গড়াই’। আর রাজশাহীর মাদিটার নাম পড়ল ‘পদ্মা’। এর আগে রাজশাহীতে ছিল দুটি মাদি ঘড়িয়াল। গত শনিবার তার একটি ঢাকা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। ঢাকায় ছাড়ার সময় রাজশাহী থেকে নিয়ে যাওয়া মাদি ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় ‘যমুনা’।

রাজশাহী-ঢাকা চিড়িয়াখানা ও বন বিভাগের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) আন্তচিড়িয়াখানা ঘড়িয়াল বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়। শনিবার সকালে রাজশাহী থেকে নিয়ে যাওয়া যমুনাকে ঢাকা চিড়িয়াখানায় অবমুক্ত করা হয়। তখন সেখান থেকে গড়াইকে ধরা হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তোলা হয়। এই ট্রাকের পেছনে পেছনে আরেকটি গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দেন আইইউসিএনের এদেশীয় পরিচালক ইস্তিয়াক উদ্দিন আহামেদ, মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম, পরামর্শক তারেক অণু, প্রকল্প সহকারী কাজী জেনিফার আজমিরী ও কর্মসূচি সহকারী সাকিব আহমেদ। ঘড়িয়ালটি নিয়ে মধ্যরাতে তাঁরা রাজশাহীতে এসে পৌঁছান। রাত গভীর হওয়ার কারণে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তাঁরা।

গতকাল সকাল নয়টায় ট্রাক থেকে নামানো হয় প্রায় আট মণ ওজনের ১১ ফুট দীর্ঘ ঘড়িয়ালটি। তখন টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ঘড়িয়ালটিকে অবমুক্ত করার সময় আইইউসিএনের এদেশীয় পরিচালক বললেন, ‘বিশ্বব্যাপী এরা এখন মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় চলে গেছে। এরা এখানে প্রজনন করবে। এটা একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রকৃতিতে এরা যেখানে থাকতে চায়, সেই জায়গায় তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, যা সম্পূর্ণ মানুষের হাতেই রয়েছে। এখন আমাদের সেই কাজটিই করতে হবে।’