রায়ে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর্যবেক্ষণে একক কারও নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি বলে উল্লিখিত বক্তব্যে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, এটা অসদাচরণ কিংবা অন্য কিছু কি না, তা খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের উন্নতির জন্য, জনগণের স্বার্থে তাঁরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রায় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির কিছু পর্যবেক্ষণ আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক।

গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে রায়টি পড়ার কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু’ কথাটি ব্যবহার করা হয়নি। বলা হয়েছে, কোনো একক ব্যক্তির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। প্রথমত এই মামলায় এটা অপ্রাসঙ্গিক। দ্বিতীয়ত ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। তাই এটা ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর ‘ফাইনালি’ হচ্ছে এটা ইতিহাস বিকৃত করার সমান।

এ-সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস বিকৃত হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। স্বাধীনতা কিন্তু রাতারাতি আসেনি বা স্বাধীনতার ঘোষণাও রাতারাতি হয়নি। এটা একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে হয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন ২৬ মার্চ। সে ক্ষেত্রে সেটাকে তিনি (আইনমন্ত্রী) নিজে বিকৃত করলেও তা অপরাধ হবে।

তাহলে এটা অসদাচরণ কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, অসদাচরণের কিন্তু কোনো সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নেই। সে ক্ষেত্রে এটা খতিয়ে দেখতে হবে অসদাচরণ কি না অথবা অন্য কিছু হয়েছে কি না। এটার অথোরিটি এখন রাষ্ট্রপতি।

ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এমন এক জায়গায় আঘাত করা হয়েছে, যেখানে হয়তো অনেকের হৃদয়ে লেগেছে। কিন্তু আমি বলব, বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে এবং আমরা শ্রদ্ধাশীল।’

 রায় নিয়ে একজন মন্ত্রীর আন্দোলনের হুমকি ও আওয়ামী আইনজীবীদের কর্মসূচি-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনাগুলো কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু রায়ের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা এসে ইতিহাস বিকৃত করার মতো পর্যায়ে চলে গেছে, এটাও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তিনি বলেন, এখন আবেগটা উচ্চপর্যায়ে আছে, এটা স্তিমিত হয়ে যাবে।

রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাৎ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষাতের বিষয়বস্তু তিনি জানেন না। তবে এটা ঠিক যে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আইন বিভাগের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলতে পারে। দেশের উন্নতির জন্য, জনগণের স্বার্থে আলাপ-আলোচনা সব সময় চালিয়ে যাবেন। পথ চলতে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। সেটা দেশের স্বার্থে নিরসন করার যখনই প্রয়োজন হবে, শেখ হাসিনার সরকার সেটা করবেই। সে ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার দ্বার সব সময় খোলা থাকবে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে রিভিউ ও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বক্তব্যগুলো ‘এক্সপাঞ্জের’ আবেদন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা আজ, কাল, পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে, তা বলা যাবে না। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান বিচারপতির ভূমিকা-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির অফিসগুলো প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি যিনি থাকেন তা গৌণ, মুখ্য হলো চেয়ার। সে ক্ষেত্রে চেয়ারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আশপাশের অনেক কিছুর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫৭ ধারার বিষয় স্পষ্ট করা হবে

আইনমন্ত্রী বলেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার স্পষ্টতায় যে অভাব আছে, সেগুলো পরিষ্কার করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সাজা ছোট অপরাধের জন্য এক রকম, বড় হলে আরেক রকম হবে। এ নিয়ে শঙ্কিত না হতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অপরাধ অপরাধের জায়গায় থাকবে। কিন্তু সাংবাদিকদের যে জায়গায় আপত্তি তা স্পষ্ট করা হবে। এমন কোনো আইন করা হবে না, যা সাংবাদিকবান্ধব নয়।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাকে কঠিন মামলা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি মামলার তদন্তও শেষ হবে এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে।

মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন ডিআরইউর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।