নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার ২৪ সেন্টিমিটার ওপরে

কুড়িগ্রামে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এর আগে এত পানি কুড়িগ্রামে হয়নি। ১৯৯৬ সালে ১ মিটার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী-রংপুর সড়কের চারটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত সোমবার রাতে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ও হোলখানা ইউনিয়নের বাংটুরঘাট এলাকায় নদীতীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে তিনটি ইউনিয়নের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে গবাদিপশুসহ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পানি উঠেছে। ফুলবাড়ী প্রায় পানিতে তলিয়ে আছে। ইউপিগুলোর সঙ্গে উপজেলার সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

ভেঙে গেছে কুড়িগ্রাম-ফুলবাড়ী উপজেলা সড়ক। এই সড়কের আরডিআরএস বাজারে ভাঙনকবলিত এলাকায় ৩০টি দোকান ভেঙে গেছে। রাজারহাটের কালুয়ারচরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে ২০টি বাড়ি। ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমণ্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পাউবোর সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার ২৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ৪২০টি চর-দ্বীপচরের ৩ শতাধিক গ্রামে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩ লক্ষাধিক মানুষ।

নাগেশ্বরীতে ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। সাপের কামড়ে সদর উপজেলার খামার হলোখানা গ্রামে জোসনা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ভেলাকোপা গ্রামের দেড় বছরের এক শিশু।

ভূরুঙ্গামারীতে বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান বলেন, শিলখুড়ি সীমান্তে ভারতের তুফানগঞ্জে কালজানি নদীর ওপর নোটাফেলা বাঁধ খুলে দেওয়ায় ইউনিয়নের কাজিয়ার চর উত্তর ধলডাঙ্গা এবং দক্ষিণ তিলাই গ্রাম তলিয়ে গেছে। শালঝোড় বিজি ক্যাম্পে পানি ঢুকে পড়েছে। বিজিবির স্পিডবোট উদ্ধারে সহায়তা চালিয়েছে।

ফুলবাড়ীর ইউএনও দেবেন্দ্র নাথ ওঁরাও বলেন, পুরো উপজেলায় ২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ভূরুঙ্গামারীর ইউএনও মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, ৭টি ইউপির ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।