শাস্তি পাওয়া ২৬ এজেন্সি এবারও জড়িত

অব্যবস্থাপনার কারণে গত দুই বছরে শাস্তি পেয়েছে এমন ২৬টি হজ এজেন্সি এবারও হজযাত্রায় সংকট তৈরি করেছে। এসব হজ এজেন্সিসহ আরও বেশ কিছু এজেন্সি এবারও সময়মতো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও হজযাত্রীদের ভিসা করেনি। তাই হজযাত্রীর অভাবে একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে এসে প্রায় ৪ হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই প্রতিটি হজযাত্রায় একই কারণে সংকট তৈরি হচ্ছে। আর এ জন্য দায়ী হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিয়েছে। কিন্তু তারপরও এ ধরনের হজ এজেন্সিগুলোকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। বরং এদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন হজযাত্রীরা।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন শুরু হয় ২৪ জুলাই। যাত্রী-সংকটের কারণে এখন পর্যন্ত বাতিল ও পেছানো হয়েছে ৩৩টি হজ ফ্লাইট। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ৯১টি হজ এজেন্সি সময়মতো বাড়ি ভাড়া ও ভিসা প্রক্রিয়া শেষ না করায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, খুব বেশি এজেন্সি অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়। ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে লাইসেন্স করে আবার অনিয়ম করেন। এসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং কখনো যাতে লাইসেন্স না নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ৯১টি এজেন্সিসহ হজযাত্রীদের পর্যাপ্ত ভিসা থাকার পরও তাঁদের ফ্লাইটে না পাঠানোর কারণে ১০ আগস্ট ৩৭৭টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
পাঠায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই তালিকার ২৬টি এজেন্সিকে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে জরিমানা করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৩টিকে ২০১৫ এবং অপর ১৩টিকে ২০১৬ সালে জরিমানা করা হয়।

এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এই এজেন্সিগুলো এ বছর সৌদি আরবে দেরিতে বাড়ি ভাড়া করেছে। কারণ শেষ দিকে বাড়ি ভাড়া করলে ভাড়া কমে আসে।

এ বিষয়ে হাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরই বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা দেখি। কিছু এজেন্সির কারণে হজযাত্রীরা কষ্ট পান। হজের পরে মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোকে কিছু টাকা জরিমানা করে। টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় বলে এজেন্সিগুলোও শাস্তিকে গুরুত্ব দেয় না।’

জড়িত যারা

০১৬ সালে হজে প্রতারণা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে মোট ৮৪টি এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, লাইসেন্স স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্ত এবং বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানা করা হয়।

শাস্তি পাওয়া এজেন্সিগুলোর মধ্যে গালফ ট্রাভেলসকে ৫ লাখ টাকা এবং গাউসে পাক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয় আল আকসা ট্রাভেলস, গাউসিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আবরার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মোজাদ্দাদীয় হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এসএম ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল। ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয় সালামত হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সোলাইমান ট্রাভেলস অ্যন্ড ট্যুরস, এসএন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, নূরানী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, জিন্নুরাইন ট্রাভেলস। ময়নামতি অ্যাভিয়েশনের জরিমানা হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। অব্যবস্থাপনার দায়ে এরা এবারও মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে গালফ ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম হাবের নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি। এ বছর তাঁর এজেন্সি থেকে হজে যাবেন ২১৩ জন। ১০ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর এজেন্সির একজন হজযাত্রীও সৌদি আরবে পৌঁছাননি। কিন্তু ১৯০ জনের ভিসা করা ছিল। শাহ আলম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘যাত্রী পাঠানোর বিষয়ে কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয় ডেকেছিল। আমাদের যাত্রীদের ভিসা, টিকিট করা আছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সবাই চলে যাবেন।’

গাউসিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দাবি করেন, ‘ভিসা হওয়ার পরই হজ কার্যালয় থেকে বলা হলো যাত্রী পাঠিয়ে দিতে। আমি বাড়ি ভাড়া করেছি যে তারিখে, তার আগে কীভাবে পাঠাব?’

২০১৫ সালে অনিয়মের দায়ে ৬৮ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত, জরিমানার মতো বিভিন্ন সাজা দিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসকে ৫ লাখ টাকা, আবাবিল ওভারসিজ লিমিটেড, আকবর ট্যুরস, আল আবরার অ্যাভিয়েশন, দারুল ইমান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, সুমাইয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও সুন্দরবন এয়ার এক্সপ্রেসকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। শাহ আমানত হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, টপকন ওভারসিজ লিমিটেড, মিডিয়া ট্রাভেল সার্ভিস লিমিটেড, আবদুর রহমান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এয়ার রয়েল অ্যাভিয়েশন ও সেন্ট্রাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরসকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এবারও অব্যবস্থাপনার তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগের বছরগুলোতে শাস্তি পাওয়া কোনো এজেন্সি এবারও জড়িত থাকলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, এ বছর এজেন্সিগুলো সময়মতো বাড়ি ভাড়া না করায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই হজ নীতিমালায় সংশোধনী আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজেন্সিগুলোকে আরও বাধ্যবাধকতায় আনা হবে।