সাতটি মানুষ নয়, খুন হয়েছে সাতটি পরিবার

নিহত তাজুল ইসলাম।
নিহত তাজুল ইসলাম।

রায় পড়ছেন হাইকোর্ট। আদালতের বাইরে অপেক্ষা করছেন নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের শিকার তাজুল ইসলামের ভাই মো. রাজু। তাঁদের পরিবারের একজন এজলাসকক্ষে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।

রায় শোনার অপেক্ষায় থাকা রাজুর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘সাত খুন মানে শুধু সাতটি মানুষ খুন নন, সাতটি পরিবারও খুন।’

রাজু জানালেন, তাঁর ভাই তাজুল প্রকৌশলবিদ্যা শিখেছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ করতেন। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে তিনিই মূলত সংসারের খরচ সামলাতেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে খুন হন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে।

রাজু বলেন, তাঁর মা শয্যাশায়ী। বাবারও বয়স হয়েছে। বড় ভাই খুন হওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে লেখাপড়া ছেড়ে চাকরি শুরু করেন তিনি।

বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পুরো পরিবার উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছে জানিয়ে রাজু বলেন, ভাইকে (তাজুল) ফিরে পাওয়া যাবে না, এ কথা ঠিক। কিন্তু ন্যায়বিচার পেলে, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হলে একটু হলেও মনে শান্তি আসবে।

রাজু বলেন, কী রায় হয়, তা নিয়ে তাঁরা কিছুটা চিন্তার মধ্যে আছেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় আছেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। অপহৃত হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের শিকার অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

তাজুলের ভাই রাজু জানালেন, ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিয়ে নজরুল যখন বের হন, তখন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন তাজুল। অপহৃত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও পরিবারের সঙ্গে তাজুলের কথা হয়। পরে অন্যদের সঙ্গে তাজুলের লাশ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে।

রাজু জানালেন, সাত খুনের ঘটনার মাস খানেক আগেই তাঁর ভাই তাজুল জীবনাশঙ্কা করেছিলেন। তাই তাজুলকে নিয়ে নজরুল তাঁর যাত্রাবাড়ীর বাসায় থাকতেন।

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলার রায় দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত। রায়ে র‍্যাবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর অপরাধজগতের ৯ সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া র‍্যাবের আরও নয়জন সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

নিহত তাজুল ইসলামের ভাই মো. রাজু (বামে)। ছবি: শেখ সাবিহা আলম
নিহত তাজুল ইসলামের ভাই মো. রাজু (বামে)। ছবি: শেখ সাবিহা আলম

বিচারিক আদালতের রায় ও নথি গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টে পৌঁছায়, তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা। শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৮ জন আপিল করেন।

পরে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গত ২২ মে শুনানি শুরু হয়। ৩৩ তম দিনে ২৬ জুলাই শুনানি শেষ হয়। রায়ের জন্য ১৩ আগস্ট দিন রেখেছিলেন আদালত। ১৩ আগস্ট রায়ের তারিখ পিছিয়ে ২২ আগস্ট নতুন তারিখ ধার্য করেন একই বেঞ্চ।

সাত খুন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া দণ্ড হাইকোর্টে বহাল থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত আজ মঙ্গলবার জানা যাবে।