দেখলাম মসজিদে নববি

আমরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে নববিতে এসেছি। সেখানে গেলাম ফজরের নামাজের সময়। নামাজ আদায় করলাম। হজের আগে হাজিরা মদিনায় অবস্থান করছেন। তাই ভিড় ছিল প্রচুর।

মদিনা সুন্দর শহর। রাস্তার পাশে কয়েকটি পাঁচতারা হোটেল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। মসজিদ কমপ্লেক্সটিও বিশাল। আধুনিক স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। অবশ্য অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে তৈরি পুরোনো মসজিদটি এখনো আছে। এটি এখন বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত। মসজিদের চারদিকে বিশাল চত্বর। সেই চত্বরে কিছু দূর পরপর ছোট ছোট পাকা ঘর। সেখান থেকে চলন্ত সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। মাটির নিচে আরও চারতলা।

মসজিদে নববি আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের অনুপম নিদর্শন। বিশাল আয়তন, অপরূপ কারুকার্য, আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা যেকোনো লোককেই মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। মসজিদে নববির খোলা প্রাঙ্গণের অন্যতম সেরা আকর্ষণ বিশাল ছাতা। শক্ত স্তম্ভের শীর্ষভাগে ছাতাগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে যখন বন্ধ থাকবে, তখন স্তম্ভের একটি অংশই মনে হয়। কিন্তু যখন রোদ ওঠে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধীরে ধীরে ছাতা খুলে যায়। প্রখর রোদে ছাতার নিচে দুই দণ্ড বিশ্রাম যেন বৃক্ষছায়াতলে বিশ্রামের মতো।

সবুজ গম্বুজের নিচে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক অবস্থিত। নবীর রওজা মোবারকের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমর (রা.)। রওজা মোবারক জিয়ারত করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দরজা (বাবে সালাম) দিয়ে ঢুকতে হয়। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হতে হয় ধীরে ধীরে। কিছু দূর অগ্রসর হয়ে যখন বাঁ দিকে নবীর রওজা মোবারক দৃষ্টিগোচর হয়, তখন খুব কম লোকের পক্ষেই অশ্রু সংবরণ করা সম্ভব হয়। অশ্রুসিক্ত হয়ে প্রাণের সব আকুতি মিশিয়ে নবীকে সালাম জানালাম। তারপর হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমর (রা.)-কে সালাম জানিয়ে বহির্গমন (বাবে বাকি) দরজা দিয়ে বাইরে এলাম। যেহেতু সব সময় শত শত লোক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এই স্থানে প্রবেশ করছেন, সে জন্য রওজা মোবারকের সামনে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। হাঁটতে হাঁটতেই সালাম দিতে হয়। লোকের চাপে কখন যে বেরিয়ে গেছি, টের পাইনি। পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে দেখে নিলাম গম্বুজের সৌন্দর্য।

মসজিদে নববির ভেতরেই একটা জায়গা আছে, যাকে বলে রিয়াজুল জান্নাত বা জান্নাতের টুকরা। সেখানে পৌঁছে মসজিদের ভেতরে নামাজ আদায় করলাম। তারপর সুযোগ করে চলে গেলাম নবীজির খুতবা দেওয়ার জায়গাটায়। মাথা ঠেকে যায়—এমন উচ্চতায় মার্বেল পাথরের ছাউনি দিয়ে ঢাকা। সেখানে নামাজ আদায় করলাম আরও দুই রাকাত। কারও মাথায় টুপি, কারও মাথায় পাগড়ি, কারও মাথা খালি। টুপিও কত রকমের। কোনোটি গোল, কোনোটি চৌকোনা, কোনোটি উঁচু, কোনোটি লম্বা। পরনের কাপড়েরও বৈচিত্র্য আছে। আফ্রিকার মানুষ পরেছেন রঙিন পাঞ্জাবি, তুর্কিরা পরেছেন একই ধরনের সাফারি। পোশাকেও দেশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।