ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অচলাবস্থা আছেই

ঢাকামুখী যানবাহনের দীর্ঘ সারির এই দৃশ্য আজ সকালে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর এলাকার। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকামুখী যানবাহনের দীর্ঘ সারির এই দৃশ্য আজ সকালে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর এলাকার। ছবি: প্রথম আলো

যানজটে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অচলাবস্থা কাটেনি। গত মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ যানজট আজ শুক্রবার চতুর্থ দিনে গড়াল। কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে এখনো ১০ কিলোমিটার আর মেঘনা সেতুর পূর্বপাড় থেকে গজারিয়ার ভবেরচর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মেঘনা সেতুর ওপর চারটি মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়লে এই যানজটের সূত্রপাত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর এই অতিরিক্ত যানবাহন সামাল দিতে সেতুর এক পাশের যানবাহনকে আটকে দিয়ে অন্য পাশের যানবাহন ছাড়া হয়। এতে যে পাশ আটকে রাখা হয়, তখন তা দীর্ঘ আকার ধারণ করে। এ ছাড়া দাউদকান্দি সেতুতে টোল ও ওজন মাপার মেশিনে ধীরগতির কারণকে দায়ী করছেন যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা।

চাঁদপুরের কচুয়া থেকে ছেড়ে আসা সুরমা পরিবহন বাসের চালক রিপন মিয়ার ভাষ্য, ভোর সাড়ে ৪টায় কচুয়া থেকে ছেড়ে দাউদকান্দির আমিরাবাদে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে পৌঁছে যানজটে পড়েন তিনি। ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে তাঁর।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের বাসের চালক হামিদ খান বলেন, কয়েক দিন ধরে কুমিল্লা ও ঢাকা অংশে যানজটের মধ্যে ভুগছি। যানজটের এ অবস্থা চলতে থাকলে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি হবে।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আল আমিন মিয়াজী বলেন, ‘টানা যানজটের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় যেতে পারিনি।’

দাউদকান্দির গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, গৌরীপুর বিলকিস মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তার, দাউদকান্দির চরমাহমুদ্দী গ্রামের স্কুলশিক্ষক মুনমুন আক্তার বলেন, টানা যানজটের মধ্যেও জরুরি কাজে আজ তাঁদের কুমিল্লার তিতাস, হোমনা ও মেঘনা উপজেলা ঘুরে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। ফলে লাগছে অতিরিক্ত সময়। সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ।

দাউদকান্দির রতনপুর গ্রামের দোকান কর্মচারী জামাল মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে যানজটের কারণে ৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি থেকে উপজেলার গৌরীপুর বাজারে দোকানে কাজে যান। দেরি হলে মালিক বকাবকি করেন। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় বুড়া বয়সে দেহে আর কুলায় না’।

দাউদকান্দি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই রজব আলী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হলেও সেতুর কাছে এসে দুই লেন হয় যায়। ফলে এখানে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পাশ আটকে অন্য পাশ ছাড়া হয়। না হলে দুই দিক থেকে গাড়ি এসে সেতুর ওপর জটলা পাকিয়ে ফেলে। মালবাহী কাভার্ড ভ্যানের চালকেরা সেতুর মুখে ওজন মাপার স্ক্যানিং মেশিন পার হওয়ার সময় দ্রুতগতিতে চলে যায়। এতে প্রকৃত ওজন বোঝা যায় না। তখন ভ্যানটিকে পেছনে এনে ধীরগতিতে যেতে বলা হয়। এতে সময় লেগে যায়।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ও ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।