সড়কে ধীরগতি, ভিড় নেই টার্মিনালে

গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ঘরমুখী যাত্রীরা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ঘরমুখী যাত্রীরা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনাল গতকাল বুধবারও ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে টিকিট পেয়েছেন। অগ্রিম যাঁরা টিকিট করেছিলেন, তাঁরাও নির্ধারিত সময়ে বাস পেয়েছেন। তবে মহাসড়কে ধীরগতি ও যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। কিছু কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।

গতকাল সকালে সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। দু-একটি বাসের কাউন্টার ছাড়া অধিকাংশই ফাঁকা। পরিবহনশ্রমিকেরা হাঁকডাক করে যাত্রী জোগাড় করছেন ও বাস মোটামুটি ভরলে বাস ছাড়ছেন। কিশোরগঞ্জগামী ইশা খাঁ পরিবহনের প্রতিনিধি মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি বাসেই ৮-১০টি সিট ফাঁকা থাকছে।

কুমিল্লার মুরাদনগর যেতে ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট করেছিলেন মো. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা থেকে টিকিট নিয়ে তিনি বাস ছাড়ার অপেক্ষা করছেন। যাত্রী কম হওয়ায় বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে। বাসের চালকের সহকারী বলেন, কাঁচপুর, দাউদকান্দি ও মেঘনা ব্রিজ এলাকায় যানজটে পড়তে হয়। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি খরচও বাড়ে। ফেরার সময় একেবারেই যাত্রী পাওয়া যায় না। খালি বাস নিয়ে ঢাকা ছাড়লে লোকসান বাড়বে। তাই আরও যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

সড়কের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেসের চালক মো. রানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল সাতটায় সায়েদাবাদ থেকে রওনা হয়ে চার ঘণ্টায় তিনি মুরাদনগরে পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে রওনা দিয়ে সাত ঘণ্টায়ও তিনি সায়েদাবাদ পৌঁছতে পারেননি। সায়েদাবাদ থেকে বের হওয়া ও ঢোকার মুখেও যানজটে পড়তে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

দুপুরে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহগামী সুমন ডিলাক্সের ব্যবস্থাপক সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়েই সাত-আটটি বাস গাবতলী ছেড়ে যায়। কিন্তু এবারের ঈদে স্বাভাবিক সময়ের মতো যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীর অভাবে বাসের ট্রিপ বাতিল করতে হচ্ছে।

একই রুটের রয়েল এক্সপ্রেসের কর্মচারী মো. সুজন বলেন, তাঁদের অধিকাংশ টিকিটই (গতকালের) আগাম বিক্রি হয়েছে। কিছু সিট ফাঁকা ছিল। কখনো এসব ফাঁকা সিটের যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে, আবার কখনো পাওয়া যাচ্ছে না।

আবার যাত্রাপথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে সময়মতো ফেরি না পাওয়ায় গন্তব্য পৌঁছতে দু-তিন ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক পরিবহনশ্রমিক। সাভার থেকে গাবতলীতে ঢোকার পথেও তাঁরা যানজটে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।

টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের যাত্রী মো. এমদাদ। তিনি বলেন, সকাল ১০টায় রাজেন্দ্রপুর থেকে বাসে উঠে বেলা তিনটায় গাবতলী পৌঁছেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা ও মিরপুর ১০ নম্বরে তাঁকে তীব্র যানজটে পড়তে হয়েছে। যানজটের ঝক্কি পেরিয়ে গাবতলী এসেই চুয়াডাঙ্গার বাসের টিকিট পাওয়ায় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন। তবে ভাড়া আগের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, রয়েল এক্সপ্রেস, পূর্বাশা পরিবহনের বিরুদ্ধেও। তবে সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে জানতে চাইলে সবাই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গাবতলীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পর্যবেক্ষক দল রাখা হয়েছে। দলের সদস্য বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক লিটন বিশ্বাস বলেন, গতকাল তাঁরা একটি অভিযোগ পেয়েছিলেন শ্যামলী পরিবহনের একটি কাউন্টারের বিরুদ্ধে। আর কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ অনুযায়ী শ্যামলী কাউন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাউন্টারের প্রতিনিধিকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালেও যাত্রীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। পরিবহনশ্রমিকেরা যাত্রী কম থাকার পাশাপাশি যাত্রাপথে যানজটের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।

 বৈশাখী পরিবহনের চালকের সহকারী আবদুর রহমান বলেন, গাজীপুরের ভোগড়া থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। এই যানজট পার হতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। তিনি বলেন, পোশাক কারখানা ছুটি না হওয়ায় এখনো যাত্রী কম। আজ বৃহস্পতিবার যাত্রী বাড়তে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শ্যামলীতে শ্যামলী ও হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। দুপুরে এই দুই পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কিনতে আসা ব্যক্তিদের খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ ঘোষ বলেন, যাত্রী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মহাসড়কে ধীরগতির কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে দু-এক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে, তবে চরম ভোগান্তি হচ্ছে না।

বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, বহুমুখী যাতায়াত ব্যবস্থা ও পরিবহনের সংখ্যা বাড়ার কারণে যাত্রীর চাপ কম মনে হয়, তবে এখন এটাই স্বাভাবিক। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার যাত্রী আরেকটু বাড়বে।