সেবায় সন্তুষ্ট, ঢুকতে গন্ধ

মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের সেবা নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি না থাকলেও প্রবেশদ্বারেই সিটি করপোরেশনের এসটিএসের জন্য সেবাগ্রহীতারা দুর্গন্ধে পড়েন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের সেবা নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি না থাকলেও প্রবেশদ্বারেই সিটি করপোরেশনের এসটিএসের জন্য সেবাগ্রহীতারা দুর্গন্ধে পড়েন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শহীদুল ইসলাম মিরপুর থেকে এসেছেন। স্ত্রী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাড়িওয়ালার কাছে সুনাম শুনেছেন। তাই অন্য কোথাও যাননি। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতে হয়েছে নাক চেপে। মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের সেবা নিয়ে রোগীদের অসন্তোষ না থাকলেও ঢোকার মুখেই সিটি করপোরেশনের এসটিএসের কারণে তাঁরা দুর্গন্ধের শিকার হন।

মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কে অবস্থিত এই সেন্টার এবং ১০০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল। এখানে মা ও শিশুদের বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। সেবা নিতে আসা শহীদুল বলেন, ‘আমার বাড়িওয়ালার বাচ্চাও এখানে হইছে। উনিই বলছেন, এখানে ভালো চিকিৎসা হয়। তাই নিয়ে আসছি। কিন্তু হাসপাতালের গেটের মুখে বিচ্ছিরি গন্ধ।’ এখানে আসা নতুন-পুরোনো সব সেবাগ্রহীতার একই অভিযোগ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) বসিয়েছে মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের প্রবেশমুখ ঘেঁষে। আজ দুপুরে দেখা যায়, এসটিএসের ভেতরে লোকজন কাজ করছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশেই কয়েকটি বর্জ্যসহ ভ্যান দাঁড়ানো। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘এটা নিয়ে কম চিঠি চালাচালি হয়নি। মেয়র ও মন্ত্রণালয়কে তিনবার চিঠি দিয়েছেন আমাদের পরিচালক। স্থানীয় এমপি এ কাউন্সিলরকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু এটা সরানোয় কোনো উদ্যোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, আবর্জনার তরল গড়িয়ে হাসপাতালের গেটে চলে আসে। সরানোর কথা বলায় সিটি করপোরেশন উল্টো তাদের জায়গা দিতে বলেছে।
ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) অজিয়র রহমানও জায়গা-সংকটের কথা বললেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা যতগুলো এসটিএস করতে গিয়েছি, কোথাও না কোথাও অবজেকশন পেয়েছি। বিকল্প জায়গা নেই।’ এসটিএস এখানেই থাকছে উল্লেখ করে বলেন, চারপাশ আটকানো, গন্ধ ছড়াবে না।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৭৪ সালে মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার চালু হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে এটি বড় পরিসরে হাসপাতাল আকারে যাত্রা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক মানুষ সেবা নিতে আসে। গত আগস্ট মাসে হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ১৩৬টি এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ২৭৬টি। এ ছাড়া বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ১০ হাজারের ওপরে। ৪৭ জন চিকিৎসক ও ২০ জন নার্স আছেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, এখানে সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁদের হয় না। এ ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দুটি আছে, তাতে হিমশিম খান। খরচ কম বলে সকাল সাতটা থেকে লাইন লাগে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগে রোববার ভর্তি ছিল ১২ জন। জেনেভা ক্যাম্প থেকে সুমাইয়া বেগম তাঁর নাতি তিন বছরের মো. সুলায়মানকে নিয়ে এসেছেন। তিন দিন ধরে ভর্তি, নিউমোনিয়ায় ভুগছে। হাসপাতালের সেবা নিয়ে বললেন, নাতি এখানেই হয়েছে। সেবা ভালো বলেই আসেন। তবে ওষুধ সব বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নবোদয় হাউজিং থেকে রিমা আক্তার ছয় মাস বয়সী মেয়েকে টিকা দিতে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘আমার আত্মীয়স্বজন সবাই এখানে আসে। খরচ তেমন নাই। ডাক্তার-নার্সও ভালো। কিন্তু হাসপাতাল ওষুধ খুব কম দেয়।’
মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক দেশের বাইরে থাকায় তাঁর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে একবার কেউ সেবা নিয়ে গেলে তিনি আরও অনেককে নিয়ে আসেন। দিন দিন রোগী বাড়ছে। সে তুলনায় ওষুধ সাপ্লাই কম।’