জুমখেতে বাম্পার ফলন!

পাকা সোনালি রঙের ধানে ঢাকা পড়ে আছে পাহাড়। খেতের সোনালি ধান কাটছে মেনকা চাকমা ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ভানু দেবী চাকমা। রাঙামাটি সদরের কামিলাছড়ি গ্রাম এলাকা থেকে গত শনিবার দুপুরে তোলা ছবি l সুপ্রিয় চাকমা
পাকা সোনালি রঙের ধানে ঢাকা পড়ে আছে পাহাড়। খেতের সোনালি ধান কাটছে মেনকা চাকমা ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ভানু দেবী চাকমা। রাঙামাটি সদরের কামিলাছড়ি গ্রাম এলাকা থেকে গত শনিবার দুপুরে তোলা ছবি l সুপ্রিয় চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে পাহাড়ে এখন পাকা ধানের মিষ্টি সুবাস। কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে ধান কাটা। প্রবল বৃষ্টি এবার পার্বত্য এলাকায় ভূমিধসে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটালেও, জুমচাষিদের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। পাহাড়ধসে ২ হাজার একর জুমখেত কমলেও এ বছর গত বছরের তুলনায় ধানের ফলন হয়েছে অনেক বেশি। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার রাঙামাটি জেলায় জুমে ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ হবে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত বছর জুমচাষ হয়েছে ১৫ হাজার ১২৫ একর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন ধান। এ বছর চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৫ একর জমিতে। জেলার সবচেয়ে বেশি জুমচাষ হয়েছে বিলাইছড়ি উপজেলায়। গত ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে ২ হাজার ২৭৫ একর জুমখেতে চাষ হয়নি। সে কারণে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০ মেট্রিকটন। যা গত বছর উৎপাদনের চেয়ে ২ হাজার ২২০ মেট্রিকটন কম। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুমে এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন।

কৃষিবিদ ও জুমচাষিরা বলছেন, পার্বত্য এলাকায় বন উজাড়ের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ কারণে আগের মতো জুমখেতে ধানের ফলন হয় না। তবে এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় জুমখেতে ফলন হয়েছে আশাতীত।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া জুমচাষের অনুকূলে ছিল। সে জন্য ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ফলন দেখে আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ বছর জুমের ফলন দ্বিগুণ হবে।’

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার জুমের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি এ বছর বাম্পার ফলন হবে। ফলন ভালো হওয়ার কারণ জুমখেতে যে পরিমাণ বৃষ্টি প্রয়োজন, তা এ বছর হয়েছে। যাঁরা আগে জুমখেতে বীজ বপন করেছেন তাঁদের খেতে ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটাও শুরু করেছেন। আগামী ২০ দিনের মধ্যে জুমচাষিরা পুরোদমে ধান কাটা শুরু করবেন।’

গত শনিবার দুপুরে রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়নের কামেলাছড়ি, দুলুছড়ি, বড়াদমসহ বেশ কিছু এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়জুড়ে জুমখেত পাকা সোনালি ধান। সেখানকার একটি খেতে ধান কাটছিলেন মেনকা চাকমা ও তাঁর মেয়ে ভানু দেবী চাকমা। তাঁরা বলেন, এ বছর জুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় ফলন দ্বিগুণ হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে পাহাড়ে জুমের ধান পাকা শুরু হয়। প্রান্তিক পাহাড়ি বাসিন্দারা জুমের চাল থেকে বছরের চার থেকে পাঁচ মাসের খোরাকি পান।

সদর উপজেলা মগবান ইউনিয়নে দুলুছড়ি এলাকার জুমচাষি সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জুমের ফলন ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছর আমরা চার-পাঁচ মাসের খোরাকি পেয়েছি। এবার আশা করছি জুমের চাল দিয়ে সাত-আট মাস চলে যাবে।’