বিদেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে তদন্ত চলছে

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের নামে বিদেশে কী কী সম্পদ আছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় সংসদের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলেদের এবং বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার নামে বিদেশে কোথায় কী সম্পদ আছে, তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চান ফখরুল ইমাম। একটি বিদেশি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে এগুলো পেয়েছেন বলে ফখরুল ইমাম জানান।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই আমাদের কাছে তা আছে। এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য একটি তদন্তব্যবস্থা আছে। সেই সূত্রেও তদন্ত করা হচ্ছে। এই তদন্তের মধ্য দিয়ে সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের বহু অভিযোগ তো জনগণ সব সময় করেছে। এটা সবাই জানে। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের কিছু টাকা আমরা কিছু ফেরতও আনতে সক্ষম হয়েছি। বোধ হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম কারও পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু জিআইএন রিপোর্টটা দিয়েছে, কাজেই এ রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে এবং এটার ওপর তদন্ত চলছে।’

সংসদে তথ্যটি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকার থেকে তুলে ধরলে বহু লোক আছে তারা মায়াকান্না শুরু করত, আমরা হিংসাত্মক হয়ে এটা করি। বিরোধী দল থেকে যেহেতু এটা এসেছে, নিশ্চয়ই মানুষ এটা উপলব্ধি করতে পারবে—এই জনগণের সম্পদ কীভাবে লুট করেছে। যার কারণে তাদের আমলে বাংলাদেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কোনো উন্নতি করতে পারেনি। আর্থসামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। জনগণের সম্পদ যারা লুটে নিয়েছে, নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত করে যখনই আমরা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাব, নিশ্চয়ই তা ফেরত আনার ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে সব আমি এই মুহূর্তে বলতে পারলাম না।’

‘ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে, প্রধানমন্ত্রী জানেন কি না?’
সাংসদ ফখরুল ইমাম তাঁর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমার কাছে একটি ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে, এটা উনি জানেন কি না। এটি হলো জিআইএন রিপোর্ট। এটা রিসেন্ট রিপোর্ট। এখানে বিএনপির খালেদা জিয়া থেকে আরম্ভ করে তাঁর পরিবারের যে টাকাগুলো পাচার করা হয়েছে, তার একটি লিস্ট আছে এখানে। এটা যদি উনি না জানেন তাহলে দু-একটি লাইন আমি পড়ে শোনাতে পারি। জিআইএন রিপোর্টটি পড়বেন কি না, জানতে চাইলে সংসদে উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্য পড়ার জন্য অনুরোধ করেন।

প্রতিবেদনের বক্তব্য তুলে ধরে জাপা নেতা ফখরুল ইমাম বলেন, দুবাইসহ অন্তত ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ আছে। এই সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। দুবাইয়ে খালেদা জিয়ার মালিকানায় একটি শপিং মল রয়েছে। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘ইকরা’-এর মালিক আরাফাত রহমান কোকো। খালেদা জিয়ার ভাগনে তুহিনের নামে কানাডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে। বিএনপি সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফের রয়েছে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে-তে বিলাসবহুল হোটেলের শেয়ার। মেরিনা বে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ১৩ হাজার শেয়ারের মালিক তিনি। খন্দকার মোশাররফের সিঙ্গাপুরে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট। সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা আমিনুল হকের নামে লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ড ও অলগেটে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। লন্ডনে বাড়ি আছে মওদুদ আহমদেরও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে দুবাইতে রয়েছে অ্যাপার্টমেন্ট। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস তাঁর সন্তানের নামে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। মালয়েশিয়ায় মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে রয়েছে ‘সিটি সেন্টার-২’-এ তিনটি ২৫০০ বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা। বিএনপির আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খানের সিঙ্গাপুরে অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

সংরক্ষিত আসনের আমিনা আহমেদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় এক কোটি কর্মসংস্থান হবে এবং অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

মানিকগঞ্জ-২ আসনের মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টায় অর্থবছর ২০১১ থেকে অর্থবছর ২০১৭ পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে ১৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমে আসছে। সামাজিক সূচকগুলোর অগ্রগতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

২০১৮ সাল নাগাদ পদ্মা সেতু যান চলাচলে উন্মুক্ত হবে
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ২০১৮ সাল নাগাদ এই সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিরা যেমন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি তাদের অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স ও দেশীয় অর্থ কোনো জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে বেশ কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে মর্মে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।