মাটি, খড়, রং নিয়ে ব্যস্ত তাঁরা

সিঁড়িতে ওঠার মুখেই রঙের ছড়াছড়ি। বড় একটি ঘরের ভেতরে সাদা রঙের প্রতিমাগুলো জ্বল জ্বল করছে। একেকটি পাত্রে লাল, গোলাপি, হলুদ, সবুজসহ নানা রং রাখা। কেউ রং লাগাচ্ছেন, কেউ মাটির প্রলেপ দিচ্ছেন। কারিগরেরা ভীষণ ব্যস্ত। দুর্গাপূজা আসতে তো আর দেরি নেই।

পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল রোডের জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিত শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দিরে নানা আকারের দুর্গা প্রতিমা বানানো হচ্ছে। আজ দুপুরে দেখা যায়, শিল্পী বলাই পাল একেকজনকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন—কোনটায় কী দিতে হবে। বংশপরম্পরায় তাঁরা প্রতিমা গড়েন। এ সময়টা এলে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে প্রতিমা গড়ার কাজে বেরিয়ে পড়েন। তবে এবার বন্যা হওয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠান ‘শিমুলিয়া শিল্পালয়’ নিয়েই ব্যস্ত।

বলাই পাল বলেন, রথের পর থেকে তাঁরা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করেন। প্রতিমা গড়ার সময় নিয়ে বললেন, ‘একটা পুরো সেট পাঁচ-ছয়জন মিলে বানাইতে ১৫ দিন সময় লাগে।’ তাঁর প্রতিষ্ঠানে আটজন কারিগর। কাঠ, বাঁশ, খড়, এঁটেল ও বেলে মাটি দিয়ে মূলত প্রতিমা বানানো হয়। তিনি বলেন, রাজধানীর অনেক মণ্ডপেই তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রতিমা দিয়ে পূজা হয়।

দরজার পাশেই প্রায় ১১ ফুট উঁচু একটি প্রতিমার কাঠামো দেখা গেল। শুকানোর অপেক্ষায় রেখে দিয়েছেন। জানালেন, বসুন্ধরা থেকে এ প্রতিমার ফরমাশ এসেছে। এটিই এখন তাঁর এখানে সবচেয়ে বড়। দাম দেড় লাখ টাকা। তবে বলাই পাল একেকটি প্রতিমা গড়তে সর্বনিম্ন ৭০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেন। জানালেন, নকশার ক্ষেত্রে অনেক ভিন্নতা এসেছে। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট থেকে ছবি নিয়ে এসে ওই রকম করে বানিয়ে দিতে বলে। দাম ওঠা-নামা করে ডিজাইনের ওপর।’

দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমা গড়েন। এবার ১৪টি ফরমাশ পেয়েছেন। আগের চেয়ে প্রতিমা এখন বেশি হয়। কারণ হিসেবে বললেন, ‘মণ্ডপ বেড়েছে। একই এলাকায় এখন অনেক মণ্ডপে পূজা হয়।’ 

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারেও প্রতিমা বানানো হয়। বলাই পালের ভাই হরিপদ পালের প্রতিষ্ঠান ‘শিমুলিয়া ভাস্কর শিল্পালয়’ এখানে। আজ তাঁর দোকানটি বন্ধ। পাশে আরও একটি দোকানে প্রতিমা বানানো হচ্ছে। কার্তিক পাল নামের এক কারিগর মাঝারি আকারের একটি দুর্গা প্রতিমার চোখ আঁকছিলেন। তিন বছর ধরে প্রতিমা গড়েন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা আয় এ সময়েই। ভোরবেলা শুরু করি। মাঝরাতও হয়ে যায়।’ প্রতিমা গড়ার অনুভূতি নিয়ে বলেন, ‘মায়ের কাজ করতে ভালোই লাগে।’ আর বলাই পাল বলেন, ‘এটা সাধনার জিনিস। মায়ের রূপ অন্তরে নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই সেটা সুন্দর হবে।’