গুলশানে অ্যাপার্টমেন্ট ভবন বানিয়ে বিপদে রাজউক

গুলশানের একটি প্লটে বৃহৎ আয়তনের ২৭টি ফ্ল্যাটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করে এখন বিপাকে পড়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। জমির মালিকানা-সংক্রান্ত মামলার কারণে ভবনটি পরিত্যক্ত পড়ে আছে। ফ্ল্যাটগুলো আদৌ বিক্রি করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গেছে ৩২ কোটি টাকা।

প্লটটির মালিকানা-সংক্রান্ত একটি রিট মামলার এক আদেশে ভবন তৈরির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি না করে আদালত বলেছেন, রাজউক ভবন নির্মাণ চালিয়ে যেতে পারে। তবে রিট নিষ্পত্তির পর রিটকারী প্লটের মালিকানা পেলে ভবনটিও তাঁকে দিয়ে দিতে হবে।

এ আদেশের পর ঝুঁকি সত্ত্বেও রাজউক নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে। কিন্তু কাজ শেষে এখন ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে পারছে না।

গত রোববার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুলশানে আজাদ মসজিদের বিপরীত দিকে ১১৫ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বরে প্রায় ১ বিঘা আয়তনের এই প্লটে বেজমেন্টসহ ১০ তলা সুউচ্চ ভবন পাহারা দিচ্ছেন কয়েকজন আনসার সদস্য। তাঁরা বলেন, মাঝেধধ্যে লোকজন এসে ফ্ল্যাট বিক্রি হবে কি না, জানতে চান। তাঁরা কোনো জবাব দিতে পারেন না।

গত শতকের ষাটের দশকে গুলশান-বনানীতে প্লট বরাদ্দ পাওয়া ৩৯ জন পাকিস্তানি নাগরিক দেশ ছেড়ে চলে গেলে ১ থেকে ২ বিঘা আয়তনের এসব প্লট বেদখল হয়ে যায়। পরে কোনো কোনো প্লটের মালিকানার সাত-আটজন করে দাবিদার সৃষ্টি হয়। রাজউকের তৈরি করা বহুতল ভবন সেই ৩৯ প্লটের ১টিতে তৈরি। ৩২ নম্বর প্লটের মালিক দাবিদারেরা হচ্ছেন নজরুল ইসলাম খান, জহিরুল ইসলাম খান ও আফিফা রাজ্জাক।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হলে ওই প্লটের মালিকানার দাবিদার আফিফা রাজ্জাক হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এ বিষয়ে হাইকোর্টের এক আদেশের বিরুদ্ধে একই বছর রাজউক আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতির আদেশে দেখা যায়, রাজউক নিজ দায়িত্বে ওই ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তবে রিট আবেদনকারীরা জিতে গেলে তাঁরা নতুন নির্মিত ভবনটি পাবেন। এ বিষয়ে রাজউকের আইন শাখার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওই আদেশটি এখনো বহাল রয়েছে। রিট মামলাটি এখনো বিচারাধীন।

দুই মাস আগে ওই প্লটে রাজউকের অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। রাজউকের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আদেশের পর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হলে ভবিষ্যতে রাজউকের বিরুদ্ধে আইন না মানার অভিযোগ আসত না। এ ছাড়া ৩২ কোটি টাকা খরচও হতো না।

২০১৩ সালের জুন মাসে অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ে নির্মাণকাজের ১০ শতাংশও শেষ করা যায়নি। পরে প্রকল্প নবায়ন করার প্রশ্ন উঠলেও রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। বরং নির্মাণকাজ বন্ধ না করে কাজ চালিয়ে যায় রাজউক।

২০১৬ সালের ৮ মে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২৭টি ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে তিন ধরনের ফ্ল্যাটের উল্লেখ করা হয়। এগুলো ২ হাজার ৩২৪ বর্গফুট, ২ হাজার ১৬৫ বর্গফুট এবং ২ হাজার ১০২ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারিত হয় ১০ হাজার টাকা। গুলশানের মতো অভিজাত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এই দামে ফ্ল্যাট পেতে গ্রাহকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দেয়।

যোগাযোগ করা হলে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, আবাসন সমস্যা লাঘবের অংশ হিসেবে রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে হাত দিয়েছিল। প্রথমে রাজউক মামলায় জিতলেও আবার মামলা হয়।

মামলা বিচারাধীন থাকাকালে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়নি, প্রকল্পের মেয়াদও নবায়ন করা হয়নি কেন? এ ধরনের প্রশ্নে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ওই সময়ে তিনি রাজউকে ছিলেন না।

মালিক দাবিদারদের পক্ষে ভবিষ্যতে রায় গেলে ভবনসহ পুরো প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করি, ভবিষ্যতেও আমরাই জিতব।’