পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিক

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে পাঁচটির ভবন পরিত্যক্ত ও ১২টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ১৪টিতে এখনো সেবা কার্যক্রম চলছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ক্লিনিক থেকে পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব পাকা ভবন লম্বায় ২৮ ফুট এবং প্রস্থে ১৬ ফুট। এক দশক পার না হতেই ওই সব ভবনে ফাটল দেখা দেয়। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ভবনগুলো পরিদর্শন করে। এর মধ্যে পাঁচটিকে পরিত্যক্ত এবং ১২টিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরিত্যক্ত পাঁচটি ভবন হচ্ছে যাদবপুর ইউনিয়নের বেড়বাড়ী, কাঁকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দপুর, হাতীবান্ধা ইউনিয়নের রতনপুর এবং কামালিয়াচালা ও গজারিয়া ইউনিয়নের প্রতিমা বংকী কমিউনিটি ক্লিনিক।

ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি ভবন হচ্ছে কাঁকড়াজান ইউনিয়নে খুংগারচালা ও গড়বাড়ি, যাদবপুরে আটিয়াপাড়া, কালিয়া ইউনিয়নে খালিয়ারবাইদ ও চারিবাইদা, বহেড়াতৈলে বেতুয়া, গোহাইলবাড়ী, কালিয়ান, দাড়িয়াপুরের দাড়িয়াপুর, বহুরিয়ার বিসিবাইদ, করটিয়াপাড়া ও কালিদাস কমিউনিটি ক্লিনিক। এর মধ্যে পরিত্যক্ত তিনটি ভবন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যত্র ঘর ভাড়া করে সেবা কার্যক্রম চলছে। বাকি ১৪টি ভবনে এখনো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আছেন। অনলাইনে তথ্য পাঠাতে তাঁদের একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের চিকিৎসা ছাড়াও প্রসূতি মায়েদের প্রসব-পূর্ব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা দেওয়া হয়। জরুরি ও জটিল রোগী ছাড়াও যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালাজ্বরের রোগীদের শনাক্ত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সিএইচসিপিদের সহযোগিতা করার জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী সপ্তাহে তিন দিন ক্লিনিকে উপস্থিত থাকেন।

গতকাল বুধবার কাঁকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দপুর ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির চারপাশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে মহানন্দপুর বাজারে একটি ঘর ভাড়া করে কার্যক্রম চলছে। ক্লিনিকের জমিদাতা আবদুল কদ্দুছ বলেন, ‘মূল্যবান জমি বিনা মূল্যে ক্লিনিকের নামে লিখে দিয়েছি। অথচ ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে আমাদের গ্রামের লোকজনকে সেবা নিতে হচ্ছে।’

মহানন্দপুর ক্লিনিকের সিএইচসিপি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন এই ক্লিনিকে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীকে সেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় বেতনের টাকা থেকে ঘরভাড়া দিয়ে সেবা করে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ভাড়া দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও গত নয় মাসে একটি টাকাও পাইনি। বিদ্যুৎ নেই। ল্যাপটপও নষ্ট।’

গজারিয়া ইউনিয়নের প্রতিমা বংকী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছি।’

বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বগা প্রতিমা কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে এখানে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। এখানকার সিএইচসিপি আশিকুর রহমান বলেন, ক্লিনিকের মাত্র ১০ ফুট দূরেই বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। অথচ ক্লিনিকে বিদ্যুতের সংযোগ নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাফিউল করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ৬ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ক্লিনিকে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপজেলা কার্যালয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিঠি দিয়েছে বলে শুনেছি।’

পিডিবি সখীপুর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) মো. শাহজাহান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিঠি এসেছে বলে আমার জানা নেই। তবে ক্লিনিকগুলো বিদ্যুতের সংযোগ চেয়ে আবেদন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে।’